শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জনপ্রশাসনে মন্ত্রী এনে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

জনপ্রশাসনে মন্ত্রী এনে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সচিব ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেখা পাওয়া কঠিন। তাই কর্মকর্তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রীকে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দিতে চাই।’ সরকার গঠনের দুই দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকের স্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের দপ্তর পরিবর্তনের সময় কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রীকে এ কথা বলেছিলেন।

মন্ত্রীদের ধারণা ছিল, বরাবরের মতো এবারও জনপ্রশাসন নিজের কাছেই রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে নিজেও বিস্মিত ইসমাত আরা সাদেক। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েই স্বস্তি বোধ করার কথা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তাঁর কিছু পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠজনদের। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আর আপত্তি করেননি তিনি। তবে কর্মকর্তাদের মতে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। ‘অভিজ্ঞতাহীন’ কাউকে দিয়ে এ মন্ত্রণালয় চলানো সম্ভব বলে মানতে নারাজ তাঁরা। তাঁদের মতে, প্রতিমন্ত্রী দিলেও এ মন্ত্রণালয়ের কাজ প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। মাঝখানে প্রতিমন্ত্রী থাকাটা নিছক আনুষ্ঠানিকতা। এতে ফাইল চালাচালিতে অহেতুক একটি ধাপ বাড়ল। একজন সিনিয়র মন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর সেদিনই দপ্তর বণ্টন করা হয়। ইসমাত আরা সাদেককে দেওয়া হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এর দুই দিন পর নতুন গেজেট করে তাঁকে দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর মন্ত্রী পেল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ এই দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মো. নূরুল হুদা ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার আমলে। এর পর থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের লাগাম সব সময়ই প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন। গত পাঁচ বছর মন্ত্রী না থাকলেও এইচ টি ইমামের মতো একজন ডাকসাইটে আমলা উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন।

ইসমাত আরা জনপ্রশাসনের প্রতিমন্ত্রী হলেও তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছড়িয়ে আছেন প্রশাসনের সর্বত্র। এসব কর্মকর্তাই নেপথ্যে থেকে সরকার পরিচালনা করেন। উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সমপর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তার ভাগ্যও নিয়ন্ত্রিত হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। কোন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে কোথায় বসানো হবে, সরকারের জন্য ঝামেলার কারণ হতে পারেন এমন কর্মকর্তাদের ওএসডি করা, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। এর মাধ্যমেই প্রশাসনে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে ক্ষমতাসীন দল। সরকারের এসব আমলারূপী কলকব্জা বিগড়ে গেলে সরকার বিপদে পড়ে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সব প্রধানমন্ত্রীই নিজের মতো করে প্রশাসন সাজিয়েছেন। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের পর প্রধানমন্ত্রী পদোন্নতির চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত পাঁচ বছরে রেকর্ডসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়। এর পরও বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ কম নয়। পদোন্নতির বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকায় কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেননি। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারের সময় বঞ্চিতরা প্রকাশ্যে আসেন। তাঁদের সঙ্গে মুখ খোলেন দীর্ঘদিন ওএসডি হয়ে থাকা কর্মকর্তারাও।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বদলি, ওএসডির মতো অপ্রিয় কাজের দায়িত্ব এবার প্রতিমন্ত্রীকে নিতে হবে। এ বিষয়ে তিনি কতটা সফল হবেন তা বলা মুশকিল। কারণ এই প্রতিমন্ত্রীর চাকরি-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অথচ সরকারি কর্মচারীদের চাকরির বিষয়গুলোই তাঁকে দেখভাল করতে হবে।

একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধিটি খুব ভালো। আসলেই সচিব ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তার পক্ষে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হতো যদি অবসরপ্রাপ্ত কোনো আমলাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী করা হতো। বর্তমান ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভায় একজন সাবেক আমলা আছেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ছিলেন সাবেক সিএসপি অফিসার।’

প্রশাসনের কর্মকর্তারা নতুন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নানা ধরনের চ্যালেঞ্জর কথা জানিয়ে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। তবে এসব আমলে নিচ্ছেন না ইসমাত আরা সাদেক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নিজে চাকরিতে না থাকলেও আমার স্বামী সিএসপি অফিসার ছিলেন। কাজেই সরকারি চাকরির বিষয়গুলো আমার জানা আছে। আশা করি এসব বিষয় আমি ভালোভাবেই সামলে নেব।’

দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি হয়ে থাকা কর্মকর্তাদের বিষয়ে নতুন সরকারের চিন্তাভাবনা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। সব কিছু বুঝে নিতে একটু সময় লাগবে। আগে বুঝে নিই। এরপর আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেব।’ বেঙ্গলিনিউজটোয়োন্টিফোর.কম