শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জনতা ব্যাংক মামলা করবে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে

জনতা ব্যাংক মামলা করবে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥: রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে অভ্যন্তরীণ স্বীকৃত ৩২টি বিলের বিপরীতে ২৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা আটকে রাখায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংকটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংকের কাছে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটি মামলা করার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠিও দিয়েছে জনতা ব্যাংক। আর এ ধরনের বিল আটকে থাকায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট-বড় কয়েকশ’ উদ্যোক্তা। টাকা না পাওয়ায় এসব ব্যবসায়ীর অনেকে ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছেন। এতে রফতানিসহ সব গার্মেন্ট ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক লেনদেনে অবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।

দুদকে পাঠানো জনতা ব্যাংকের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, লোকাল ডকুমেন্টারি বিল কেনার ক্ষেত্রে এলসি ইস্যুকারী ব্যাংকের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি প্রধান ও মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে যে ব্যাংক স্বীকৃতি দেয়, সেই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও সুনামের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। সোনালী ব্যাংক দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। কাজেই তাদের স্বীকৃত বিল ক্রয়ে ঝুঁকি না থাকাই স্বাভাবিক। এ বিবেচনায় বিলগুলো কেনা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে স্থানীয় রফতানি বিল কেনার আগে জনতা ব্যাংক থেকে শাখাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনে এসব বিলের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই বিলগুলো কিনেছে জনতা ব্যাংক। এসব বিল মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পাওনা পরিশোধ করছে না সোনালী ব্যাংক। তবে এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত যুগান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকও চায় স্বীকৃত বিলের অর্থ পরিশোধ করতে। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বিল পরিশোধ করতে গেলে যেন সোনালী ব্যাংকের আবার কোনো বিপদ না হয়। এ জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, স্বীকৃত বিল পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংককে একাধিকবার সময় বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক প্রকৃত স্বীকৃত বিল যাচাইয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার মোঃ ইকবালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে ৫৮৬টি স্বীকৃত বিলের অর্থ পরিশোধের সুপারিশ করে। উল্লিখিত ৩২ বিল এর অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, সোনালী ব্যাংক যেসব স্বীকৃত বিলে একসেপটেন্স দিয়েছে সেসব বিলের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য। তবে আইন অনুযায়ী চলতে গিয়ে সোনালী ব্যাংককে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ফলে কিছু কিছু বিল এখনও আটকে আছে। জানা গেছে, আমদানিকারদের ব্যাংকের স্বীকৃতি বা নিশ্চয়তার বিপরীতে কমিশনের বিনিময়ে রফতানিকারদের বিল কেনে ব্যাংকগুলো। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম। এর মাধ্যমে আমদানিকারকের ব্যাংকের দায় সৃষ্টি হয়। নিয়মানুযায়ী রফতানিকারক মালামাল রফতানি করার জন্য প্রথমে দেশী-বিদেশী সরবরাহকারীর অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা হয়। সে মোতাবেক হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশীয়-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলে। ঋণপত্র পাওয়ার পর সরবরাহকারী যথারীতি মালামাল গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করে এবং সরবরাহকারীর মূল্য সংগ্রহার্থে রফতানি দলিল সরবরাহকারী ব্যাংকে (নেগোসিয়েটিং ব্যাংকে) দাখিল করে। ব্যাংকিং নিয়মানুযায়ী নেগোসিয়েটিং ব্যাংক রফতানি মূল্য আদায়ের জন্য এলসি ইস্যুয়িং ব্যাংকে দলিলাদি প্রেরণ করে। এলসি ইস্যুয়িং ব্যাংক রফতানি দলিল পাওয়ার পর দলিলাদি সঠিক হলে তার মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করে। অন্যথায় তার মূল্য পরিশোধের জন্য ডিউ ডেট প্রদানসহ একসেপটেন্স প্রদান করে। একসেপটেন্স অনুযায়ী এলসি ইস্যুয়িং ব্যাংক ডিউ ডেট-এ মূল্য পরিশোধ করে থাকে।

উল্লেখ্য, হলমার্ক কেলেংকারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ বিলের অর্থ আটকে দেয় সোনালী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সোনালী ব্যাংকের গ্যারান্টি দেয়া বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে ব্যাংকটিতে। এসব নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হয়েছেন কয়েকবার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠনগুলো একাধিকবার বৈঠকও করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভাতে। ওই সভায় তিনি বলেছেন, সম্প্রতি কিছু কিছু ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নে নানা অজুহাতে অনীহা ও বিলম্ব প্রদর্শন করছে। এ ধরনের অনেক অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছে। এ কারণে যাদের অনুকূলে গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছিল তারা আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ব্যাংক গ্যারান্টির মূল্য যথাসময়ে পরিশোধে আপনারা তৎপর থাকবেন এটাই কাম্য। অন্যথায়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা বাধ্য হব। অবশ্য এর আগেও স্বীকৃত বিল পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংককে একাধিকবার চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা যেসব অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক এলসি ইস্যু করেছে এবং বিলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে সেসব স্বীকৃত বিল পরিশোধ করতে পারবে। ওই সব বিল দুদকের তদন্তাধীন থাকলেও সোনালী ব্যাংক তা স্বীয় বিবেচনায় পারিশোধের ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হবে। এদিকে অভ্যন্তরীণ আমদানির স্বীকৃত বিলের অর্থ দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়েছে দেশের রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। সম্প্রতি তিন সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানান।

দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এ জালিয়াতির ঘটনায় হলমার্কসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠান মিলে আত্মসাৎ করেছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সাতটি সরকারি ব্যাংক, ২৯টি বেসরকারি ব্যাংক এবং পাঁচটি বিদেশী ব্যাংকের ৯৪টি শাখার মাধ্যমে এসব অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। হলমার্ক ছাড়া অন্য পাঁচ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- প্যারাগন নিট কোম্পানি, খানজাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেড, ডি অ্যান্ড স্পোর্টস লিমিটেড, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড ও নকশি নিট লিমিটেড।যুগান্তর।