শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জঙ্গি নিয়ে সংকট বাড়ছে

জঙ্গি নিয়ে সংকট বাড়ছে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
জঙ্গি নিয়ে সংকট বাড়ছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ বলছে, সরকারকে বিব্রত করতেই সুপরিকল্পিতভাবে হঠাৎ করে জঙ্গি তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আর এই জঙ্গি তৎপরতায় দিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। জঙ্গিবাদকে জাতীয় নির্বাচনের অন্তরায়। বিএনপি বলছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বানচাল করতেই জঙ্গি ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে। বিএনপি বলছে জঙ্গির ঘটনা পরিকল্পিত। এই নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি বলেছেন, জঙ্গি নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। আবার ভারতীয় মিডিয়া বলছে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা ভারতে যাচ্ছে। এটা সম্প্রতি তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্য সময়ের তুলানায়। বাংলাদেশ এনিয়ে নাকি ভারত সরকারের কাছেও অভিযোগ করেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জঙ্গিবাদকে জাতীয় নির্বাচনের অন্তরায় বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্য হুমকি। দেশের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন সরকারকে বিব্রত করতেই সুপরিকল্পিতভাবে হঠাৎ করে জঙ্গি তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আর এই জঙ্গি তৎপরতায় মু দিচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বানচাল করতেই জঙ্গি ইস্যু সৃষ্টি করা হয়েছে। তার কথা জবাবে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন-বিএনপি-জামায়াতের মদদেই জঙ্গি হামলা ঘটছে। সেই নেতার উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আপনাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জঙ্গি হামলার বেনিফিসিয়ারি কারা? কারা জঙ্গিবাদকে জিইয়ে রেখে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে? এ বিষয়টি জনগণের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। দানবীয় জঙ্গিবাদ দেশ থেকে দূর হোক তা বর্তমান সরকারই চায় না। যার ভুরি ভুরি প্রমাণ মিলছে জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের ভূমিকায়।

তিনি র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হানিফ মৃধা-সোহেলদের মা ও স্ত্রীদের মর্মস্পর্শী কান্নায় জনগণের কাছে জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা স্পষ্ট হচ্ছে মনে করেন। বলেছেন, জঙ্গির নামে যাদেরকে সন্দেহমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হচ্ছে, সেটিও রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। বর্তমানে গুম-অপহরণের অধিকাংশ ঘটনা পুলিশ থানায় নথিভুক্ত করতে চায় না। গুম-অপহরণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকায় ওইসব ঘটনায় থানায় মামলা করা রীতিমতো দুঃসাধ্য। এমনকি তা সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করতেও চায় না, আর করলেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।

জঙ্গি দমনে সরকারের রহস্যজনক আচরণের কারণেই জঙ্গিবাদ নির্মূল হচ্ছে না। সরকারের অশুভ পরিকল্পনা হৃদয়াঙ্গম করতে পারলেও মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদের সামগ্রিক তৎপরতা আড়াল করছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষ যখন ফুঁসে উঠছে, ঠিক তখনই জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দেশব্যাপী রক্তাক্ত জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের এই বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে দেখছে জনগণ। জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশের মানুষকে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে ফেলে রাখা হচ্ছে।

রাজধানীর দু’টি জঙ্গিবাদী ঘটনায় র‌্যাব ও নিহতদের স্বজনদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কোনটি সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিহতদের পরিবার ও র‌্যাব বক্তব্যের মধ্যে কোনটি সত্য? পরিবারের দাবি সত্য হলে আমরা কোন দেশে বাস করছি? সত্য উদঘাটন করতে হবে। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে এখন।

ফখরুল আরও বলেছেন, হানিফের পরিবার বলছে, ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর র‌্যাবের দাবি, আশকোনায় আত্মঘাতী হামলার দিন সন্দেহভাজন হিসেবে হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব অফিসে নেওয়ার পর তার বুকে ব্যথা শুরু হলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, পরিবার ও র‌্যাবের বক্তব্যের মধ্যে কোনটি সত্য? পরিবারের দাবি সত্য হলে আমরা কোন দেশে বাস করছি? এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে এক কথা। পরিবার বলছে ৩-৫ মাস আগে তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাহলে কি জঙ্গিবাদকে প্রকাশ করার জন্য তাদের হত্যা করা হচ্ছে?

খিলগাঁওয়ে র‌্যাব ক্যাম্পের সামনে নিহত যুবককে নিয়ে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, মোটরসাইকেলে নিরিবিলি জায়গায় দিয়ে যাচ্ছিল ওই যুবক। মৃতের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। অথচ মোটরসাইকেলে একটা গুলির চিহ্নও পাওয়া যায়নি। প্রকৃত ঘটনা বের করে এসবের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। সরকার ভয়ঙ্কর খেলায় নেমেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে জানি না। আগুন নিয়ে খেলবেন না। সরকার জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে। তারা প্রকৃত  রহস্য উদঘাটনে আন্তরিক নয়।

তিনি বলেন, আমরা তিস্তার পানি চাই। ফারাক্কার পুনরাবৃত্তি চাই না। অভিন্ন ৫৪টি নদীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার যেন পাই, সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। সীমান্তে বেআইনিভাবে হত্যা না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন ও জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে কোনো কথা নয়। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও স্বাধীনতা-সার্বভোমত্ব রক্ষা করবো।

জঙ্গিদমনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাদের আহ্বান আওয়ামী লীগ বারবার প্রত্যাখান করেছে এমন দাবি করে বিএনপির নেতা রিজভী বলেন, জনগণের কাছে আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে, জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে সরকারই ফায়দা নিচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে রিজভী বলেন, আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বলতে চাই-আজকে দেশের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব সুরক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে কখনোই ছিনিমিনি খেলতে দেবে না জনগণ। এ দেশের মানুষ দৃঢ়তা, সাহস ও দেশপ্রেমের অদ্ভুত নিবিষ্টতা নিয়ে ভারতের সাথে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে আবারও রক্তাক্ত জঙ্গি তৎপরতার কৌশল নেওয়া হয়েছে। জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সরকার পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদের সামগ্রিক তৎপরতা আড়াল করছে। জনগণের কাছে আজ পরিষ্কার, জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে সরকার ফায়দা নিচ্ছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনাদের দলের নেতারা প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে নানা কথা বলছেন। অথচ সে বিষয়টি আপনার মতো মন্ত্রীরা জানেন না, নাকি বেমালুম চেপে যাচ্ছে। এখানেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে।

এদিকে র‌্যাবের ব্যারাকে আতœঘাতী হামলার পর পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ওই পাঁচ জঙ্গি রাজধানীর মিরপুর ও কাফরুলে সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।  আরও জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি সংগঠনের একটি সেলের সদস্য। এ সেলের নিয়ন্ত্রক ছিলেন অলিউজ্জামান। নাশকতা পরিচালনায় সেলের প্রধান মনির ও সালমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।  তাদেরকে ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আনোয়ারু আলম বোমা তৈরিতে পারদর্শী। আবুল কাশেম সংগৃহীত আরবিতে লেখা বিভিন্ন উগ্রবাদী মতাদর্শ বাংলায় ভাষান্তর করে ভাইরাল আকারে নেটে ছড়িয়ে দিতেন। সালেহ আহম্মেদ এক বছর আগে চট্টগ্রামে অস্ত্র চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ নেন। মোহন গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে।

এদিকে একের পর এক জঙ্গি অভিযান চলছে। তবে সরকার বিষয়টি তাদের মতো করে বললেও বিএনপি বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আমাদের সময়.কম