বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ছাত্রীকে শিক্ষকের কুপ্রস্তাব এবং

ছাত্রীকে শিক্ষকের কুপ্রস্তাব এবং

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ইনস্টিটিউটেরই এক ছাত্রী। একই সাথে ভূয়া কাবিন নামা বানিয়ে বিয়ে করেছেন বলেও প্রচার করেন ওই শিক্ষক। এমনটাই দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।

এ বিষয়ে গত ১২ এপ্রিল ইনস্টিটিউটের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বিষয়টি তদন্তে গত ২২ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগে ছাত্রীটি বলেন, ‘আবাসন সংকট নিরসনের জন্য ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ও প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষকের (সাইদুল ইসলাম সরকারের) নিকট একটি আসনের জন্য অনুরোধ করতে গেলে ওই শিক্ষক আমাকে নানা প্রলোভন দেখান এবং অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেন। আমি উনার কুপ্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে ইনস্টিটিউট থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।’

বিষয়টি মৌখিকভাবে ইনস্টিটিউটের পরিচালককে জানানোর পর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে বেড়ানোর অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘মুঠোফোনে আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করলে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে দেওয়া হবে না।’

পাশাপাশি ওই শিক্ষক তাকে জীবননাশের হুমকিও দেন বলেও অভিযোগে জানান ছাত্রীটি।

লিখিত অভিযোগের সবশেষে ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল লিখিত অভিযোগটি দেয়া হয়। সঙ্গে কথোপকথোনের রেকর্ডের একটি মেমোরি কার্ডও দেন ছাত্রীটি। এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় ২২ এপ্রিল আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান ও সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়া। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

তবে এখনও প্রাথমিক তদন্তই শুরু করতে পারেনি কমিটি। তিনবার বৈঠকের সময়ে দিয়ে একবারও বসতে পারেনি কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ এপ্রিল ও ৫ মে এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু কমিটিতে থাকা এক সদস্যের ব্যস্ততার কারণে বসা হয়নি। গত ৮ মে বসার কথা থাকলেও হঠাৎ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলে আসায় বসা হয়নি। বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করবো। আশা করছি ১৫ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যায়নি। আর তদন্ত কমিটির এক সদস্যর সঙ্গে অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বৈঠকে আসছেন না। আসলে এর সঠিক তদন্ত হবে না।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার নামে ক্লাসে কুৎসা রটাচ্ছেন ওই শিক্ষক। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তিনি অনেককে উৎসাহিত করে তুলছেন। তারা নিত্য আমাকে এবং আমার পরিবারের সবাইকে লিখিত অভিযোগ তুলে না নিলে প্রাণনাশ করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এখনই নিউজ না করার অনুরোধ করছি। ওই ছাত্রী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেন কিন্তু তা সত্য নয়, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচছে এবং আমি তদন্তের দিকেই তাকিয়ে আছি।’

তবে ভুক্তভোগী ছাত্রী দাবি করেন ওই শিক্ষকের সঙ্গে তার কোনো বিয়ে হয়নি। ছাত্রীটি বলেন, ‘ওই শিক্ষকের স্ত্রী আর কখনও তাঁর স্বামী ঝামেলা করবেনা-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি হলুদ কাগজে আমার একটি স্বাক্ষর আদায় করে নেন। অন্য কিছুতেই আমাকে ফাঁসাতে না পেরে জোর করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে বিয়ের কাবিননামা বানান ওই শিক্ষক।’

ছাত্রীটির স্বামী বলেন, ‘১৬ নভেম্বর বিয়ে হওয়ার পর থেকে আমরা একসঙ্গেই আছি। এমনকি ৭ জানুয়ারি যে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে ওইদিন তো সারাদিন আমার স্ত্রী আমার সঙ্গেই ছিল। প্রতিবাদ করায় আমার স্ত্রীর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন উল্টো তাকেই হয়রানী করতে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে।’

ছাত্রীটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের লিখিত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে নানাভাবে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে অভিযোগ তুলে না নিলে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়ের লাশ পাওয়া যাবে। আমরা এসব থেকে মুক্তি চাই।’ সংবাদ২৪.নেট. ডেস্ক