শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > চিকিৎসা সেবায় সঙ্কট বাড়ছেই

চিকিৎসা সেবায় সঙ্কট বাড়ছেই

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেড়েছে মেডিকেল কলেজ। ফলে আনুপাতিক হারে বাড়ছে চিকিৎসকের সংখ্যা। তবুও দেশে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। বরং মোট জনসংখ্যার বিপরীতে বাড়ছে চিকিৎসকের হারের পার্থক্যও। বর্তমানে হাজারে এই অনুপাত দশমিক ৪০। দেশে যে চিকিৎসকের সংখ্যা চাহিদার পর্যাপ্ত নয়, সরকার তা স্বীকারও করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক জুনে সংসদে মন্তব্য করেছেন- ‘এজন্য সেবা প্রদানে কিছুটা ভাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।’ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন তাই। ‘একেবারেই যথেষ্ট নয়’- বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিএমডিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আবু শফি আহমেদ আমিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এ শিক্ষক এজন্য দায়ি করেন সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়াকে। বলেন, সমস্যাটা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থারই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ডাক্তারের সংখ্যা এখন ৬১ হাজার ৫১২ জন। আর ২০১১ সালে প্রকাশিত পঞ্চম আদমশুমারির হিসেবে জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ০১৫। এ অবস্থায় ২ হাজার ৪৭৯ দশমিক ৪৮ জনের জন্য চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন ১ ডাক্তার। বাংলাদেশে বর্তমানে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় অনেক কম। এ মুহূর্তে বিশ্বে এক হাজার মানুষের সেবায় চিকিৎসকের গড় অনুপাত ১ দশমিক ৪২। আনুপাতিকহারে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে কিউবা- ৬ দশমিক ৭২-এ। যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৪২ এবং চীনে ১ দশমিক ৪২। পার্শ্ববর্তী ভারতে এই হার দশমিক ৬৫। বাংলাদেশে যে অনুপাত আছে তাকে ১ এ উন্নীত করতে হলেও মেডিকেল কলেজগুলোর সংখ্যা বাড়াতে হবে প্রায় দ্বিগুণ। তবে এ মুহূর্তে সরকারি মেডেকেল বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। বেসরকারি উদ্যোগে কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও নানা ঘাত প্রতিঘাত উৎরিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্য নীতিমালায় এখন এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। নানান শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত বেসরকারি মেডিকেলের অনুমতি দেয়া বন্ধ রয়েছে। যদিও ‘সমস্যার সমাধানে চিন্তিত সরকার’- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, দেশের প্রত্যেক জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে আমাদের। একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আলোজনাও করেছেন। সেক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালকে কলেজে রূপান্তরিত করা হতে পারে। একই সঙ্গে নার্সিং কলেজও। সরকারের শেষ সময়ে এসে হয়তো তা বাস্তবায়ন হবে না। তবে টাঙ্গাইল জেলা হাসপাতালকে কলেজে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিকতা এ সময়ে শুরু হতে পারে বলে তিনি জানান।
দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক না বাড়ার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রফেসর ডা. আবু শফি আহমেদ আমিনের মতে, অনুপাত কমাতে শুধু ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ালেই চলবে না। চিকিৎসক বাড়ানোর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত থাকতে হবে তাদের দক্ষতা, মেধা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টিও। পাশাপাশি নার্স এবং প্যারামেডিকও দরকার চিকিৎসা সেবায় সঙ্কট নিরসনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়োগ পেয়েও মফস্বল ছেড়ে শহরমুখী হওয়ার কারণে সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে। বিএমডিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন সক্রিয়ভাবে চিকিৎসা পেশায় জড়িত আছেন ২৯ হাজার ৯০০ চিকিৎসকের কিছু বেশি। দেশের বাইরে আছেন ১০ হাজারেরও কিছু বেশি চিকিৎসক। এদের সবাই সেবায় নিয়োজিত থাকলে সার্বিক চিকিৎসার উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তো বলে মনে করে বিএমডিসি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমবিবিএস চিকিৎসকের পাশাপাশি দেশে ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা এখন ৫ হাজার ২৬৭। নার্সের প্রয়োজন ২৭ হাজার ২৫৫ জন। অথচ আছেন ১৭ হাজার ৮৫৬ জন। ৯ হাজার ৩৯৯ নার্সের স্বল্পতা নিয়ে চলছে এখনকার চিকিৎসা সেবা।
এদিকে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুকদের চাহিদা ও চিকিৎসক বাড়ানো- এ দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার চলতি বছর থেকে আসন সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করছে। এ সংখ্যা চলতি বছর ১০০ থেকে ১৫০টির মধ্যে হতে পারে। আগস্টের প্রথম দিকে বিষয়টি চুড়ান্ত করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এটি ভবিষ্যতে খুব যে প্রভাব ফেলবে তা মানছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ১৮৫৮ সালে ঢাকায় মিটফোর্ড মেকিডেল স্কুল বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে দেশে আনুষ্ঠানিক মেডিকেল শিক্ষা শুরু হয়। তারপর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল স্কুল। এ স্কুলগুলোই দীর্ঘদিন দেশে চিকিৎসক তৈরি করেছে। পরে ১৯৪৬ সালের ১০ই জুলাই পূর্ব বাংলার প্রথম মেডিকেল কলেজ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ তার যাত্রা শুরু হয়। এখন সব মিলিয়ে দেশে সরকারি ২২টি এবং বেসরকারি ৫৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এখান থেকে বছরে বেরুচ্ছেন ৭ হাজারের মতো এমবিবিএস চিকিৎসক। এর সঙ্গে আছে ৯টি সরকারি ও ১৪টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের ১ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক। প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, বেসরকারি ভাবে চাইলে এখনও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে। যে সব জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোন মেডিকেল কলেজ নেই সেখানে আবেদন করলে অগ্রাধিকার সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হবে। তবে এর জন্য অবশ্যই ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকতে হবে।