শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > চারদফা দাবিত, ২১ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি চলছে

চারদফা দাবিত, ২১ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি চলছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

চারদফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে সোমবার (১ জানুয়ারি) থেকে কর্মবিরতিতে চলছে সারা দেশের ২১ হাজার স্বাস্থ্য সহকারীদের। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন দাবি আদায় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। যার ফলে সারা বাংলাদেশের ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকা দান কেন্দ্র বন্ধ করে তারা স্ব-স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থান করছেন। টিকা দান কেন্দ্র বন্ধের ফলে প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ মা ও শিশু টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য সহকারীদের চারদফা দাবির মধ্যে রয়েছে, বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, মূল বেতনের ৩০% মাঠ-ভ্রমণ ভাতা ও ঝুকি ভাতা, প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ প্রদানের নিশ্চিত ও ১০% পোষ্য কোটা প্রর্বতন করা।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এনায়েত রাব্বির লিটন বলেন, আমরা দাবি আদায়ের লক্ষে গত মাস আগে স্বাস্থ্য সহকারীদের পক্ষ থেকে পুরো দেশের জেলা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে স্মারকলিপি প্রদান করি। চারদফা দবি আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি। আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাস, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ, অন্ধত্ব দূরীকরণসহ তৃণমূল পর্যায়ে সফল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছি।

এছাড়া গুটি বসন্ত, পোলিও নির্মূল তথা পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের বৃহৎ কর্মসূচি এমআর ক্যাম্পেইন সফলভাবে সমাপ্ত করেছে। আমাদের ইপিআই কার্যক্রমের ফলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালুতে সরকারি নির্দেশে স্থান নির্বাচন, স্থানীয় জনগণ হতে বিনামূল্যে জমিদানে উদ্বুদ্ধকরণ, নির্মাণ তদারকিসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বর্তমান সরকারের সফল ও স্বার্থক উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিককে গ্রামীণ জনগণের দোর গোড়ায় সহজলভ্য সেবার মডেল কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। যার ফলে কম খরচে অধিক সেবা প্রাপ্তির মডেল দেশে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের সফলতা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের ফসল হিসাবে প্রধানমন্ত্রী এমডিজি, সাউথ সাউথ পুরস্কার, গ্যাভি কর্তৃক শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের স্বীকৃতি অর্জন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার টিকাদানে শ্রেষ্ঠত্ব এবং পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জাইকা কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তিতে আন্তজার্তিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশী বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজগুলো টেকনিক্যালধর্মী হলেও দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্য সহকারীরা টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবি করে এলেও সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় পদমর্যাদাসহ চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহকারীদের মহাসমাবেশে পদ-মর্যাদাসহ বেতন বৈষম্য নিরসনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অর্থ, জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কমিটির অনুকূল সিদ্ধান্ত থাকা সত্বেও আদো তা বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচএসসি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাশ ব্লক সুপারভাইজার যারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাক। ১৯৮৫ সালের ৫ আগষ্ট এক সরকারি আদেশে তাদের বেতনস্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উর্ত্তীণ করা হয়। ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল আবার তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করা হয় এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকারি আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটনারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয় এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদেরও ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অধীনস্থ প্রকল্পের আওতাধীন এইচএসসি পাস সিএইচসিপিদেরকে ১৪তম গ্রেডে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা তৃণমূলের স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি এখনো।

অবশেষে স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, মূল বেতনের ৩০% মাঠ ভাতা, ঝুকি ভাতা ও ভ্রমণ ভাতা, প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ প্রদানের নিশ্চিত ও ১০% পোষ্য কোটা প্রর্বতন করাসহ চার দফা দাবি বাস্তবায়নে ইপিআইসহ তাদের সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন বন্ধের ঘোষণা দেন।