শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > চামড়ার ড্রাম ২৪ ঘণ্টাই চইলবো!

চামড়ার ড্রাম ২৪ ঘণ্টাই চইলবো!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: চামড়ার ড্রাম ২৪ ঘণ্টাই চলইলবো। কোরবানির ঈদে ট্যানারিতে বহুত চামড়া আইছে। বইয়া থাইকবার সময় নাই। এই অবস্থা আরো ৩ মাস চইলতে থাইকবো।’

কোরবানির ঈদ পরবর্তী ব্যস্ততা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে জানান লেক্সকো ট্যানারি শিল্পের ড্রামচালক খলিলুর রহমান।

কোরবানি ঈদে আশানুরূপ পশুর চামড়ার সাপ্লাই হয়েছে ট্যানারিগুলোতে। এতে করে দিন-রাত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাজারীবাগের ট্যানারিপাড়া।

কাঁচা চামড়া রফতানি উপযোগী করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। প্রতিটি ট্যানারিতে চার থেকে পাঁচটি ড্রাম থাকে। এতে কেমিক্যাল দিয়ে কাঁচা চামড়া থেকে পশম ছাড়ানো, ওয়েট ব্লু করা ও চামড়া নরম করা হয়। এছাড়া পশুর চামড়ায় রং করার জন্য হরেক রকমের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

হাজারবীবাগ ট্যানারিশিল্পে গিয়ে দেখা গেছে চামড়া রফতানি উপোযোগী করার জন্য প্রথমে কাঁচা চামড়ায় চুন সোডিয়াম দিয়ে মোটরচালিত বড় ড্রামের মাধ্যমে পশম ছাড়ানো হয়। এর পরে ভেজা চামড়া সাদা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাষুনাশক কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এর পরে ফ্ল্যাশিং নামক মেশিন দিয়ে চামড়া থেকে মাংস ও চর্বি ছাড়িয়ে আবারও ড্রামে প্রবেশ করানো হয়। এর পরে চামড়া ওয়েট ব্লু করার জন্য কেমিকেল দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ড্রামে ঘোরানো হয়।

ওয়েট ব্লু চামড়াকে আবার স্পিলিয়েটিং মেশিনের মাধ্যমে দুটি পাটে বিভক্ত করা হয়। চামড়ার উপরের অংশকে পিওর লেদার বলা হয়ে থাকে বলে জানান ফিনিক্স লেদারের শ্রমিকেরা।

চামড়া থেকে পশম ছাড়ানোর জন্য ক্লোরাইড এসিড ও জীবাণু ধ্বংস করতে সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করা হয়। সাধারণ একটি কাঁচা চামড়াকে রফতানি উপোযোগী করতে ১৩ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে বলে জানান শ্রমিকেরা।

লেক্সকো ট্যানারির সুপারভাইজার নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কাঁচা চামড়া বিদেশে পাঠানোর উপযোগী করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। ২০ থেকে ২৫টি চামড়ার প্যাকিং করে বিদেশে পাঠানো হয়। কাঁচা চামড়া থেকে সেটিং আউট অর্থাৎ বিক্রির উপোযোগী করতে নানা পদের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ক্রেতা যে ধরনের রং চায় আমরাও সেই ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকি।’

ট্যানারী মালিকেরা সাধারণত পোস্তা (পোস্তগোলা) থেকে ও দেশের বিভিন্ন ফড়িয়ার মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। লালবাগের পোস্তা ব্যতিত নাটোর ও ময়মনসিংহে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হয়। চামড়া সংগ্রহের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে রাখলে চামড়া তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত ফড়িয়ারা সংগ্রহ করতে পারে বলে জানান পোস্তার আড়তদাররা।

চামড়াশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই জানান, ঈদুল আযহাতে কোরবানির গরুর দাম কম থাকায় এবার প্রচুর পরিমাণে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে চামড়ার দাম ভালো থাকায় পাশ্ববর্তী দেশে কাঁচা চামড়া এবার পাচার হয়নি বলে জানায় বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযীয় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগঠনের তথ্যানুযায়ী সারা বছরে যে চামড়া সংগ্রহ করা হয় এর মধ্যে কোরবানির ঈদেই ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয়।

সংগঠনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ঈদুল আযহায় সারা দেশ থেকে ২৪ লাখ পিস গরু ও মহিষের চামড়া সংগ্রহ করা।এছাড়া ৭০ লাখ পিস ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ করা।

এই প্রসঙ্গে সংগঠনের চেয়ারম্যান আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া সংগ্রহ ঈদুল আযহাতেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ ভারতে চামড়া পাচার রোধে প্রশাসনের তৎপরতা ও কোরবানির পশুর দাম কিছুটা কম থাকা। তবে এবার ভারত ও পাকিস্তানের থেকে আমাদের দেশের পশুর চামড়ার দাম অনেক ভালো। বাইরের দেশের ক্রেতারাও আমাদের দেশের চামড়া পছন্দ করছে।’

লালবাগের পোস্তার আড়তদারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোস্তার আড়তদার সাইফুল বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদার থেকে ১০ থেকে ১২ গুণ চামড়া বেশি পাইছি। গরুর দাম কম, মানুষ কোরবানিও বেশি দিছে। আশা করা যায় তিন থেকে চার মাস ধরে চামড়ার ব্যবসা চইলবে।’

পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া সংগ্রহের কারণে এক ধরণের উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে ট্যানারিশিল্পেও। তবে কিছুটা হলেও এতে বাধাগ্রস্ত করেছে মৌসুমি ফড়িয়ারা। লালবাগ পোস্তা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারির পক্ষ্ থেকে স্থানীয় ভাষায় একটি করে জাছন্দার(ঠিকাদার) থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ২৯৬ মিলিয়ন ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ আরো ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের(বিটিএ) মহাসচিব মোশারফ হোসেইন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এবার অনেক চামড়া সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি ট্যানারি ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের ব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এই ব্যস্ততা প্রায় তিন মাস স্থায়ী থাকবে।

বিটিএসূত্র জানায়, সারাদেশে প্রায় ২২০টি ট্যানারি রয়েছে। অধিকাংশই ঢাকার হাজারীবাগে অবস্থিত। এতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে আট লাখ লোক জড়িত। প্রতিবছর প্রায় ২২০ মিলিয়ন ফুট চামড়া সংগ্রহ করা হয়। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য পৃথিবীর ৫৩টি দেশে রফতানি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হংকং, জাপান, তাইওয়ান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন ও সিঙ্গাপুর।