বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা তৃতীয় দিন চলছে। এখনো অনেক স্টল-প্যাভিলিয়নের কাজ সম্পন্ন হয়নি। অসম্পন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে চলছে ডেকোরেশন, অয়েলিং, লাইটিং ফ্লোরিং এবং সিলিংয়ের কাজ। সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও দিন কাটাচ্ছে অনিরাপদ পরিবেশে। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে বাণিজ্যমেলা। শনিবার বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টল-প্যাভিলিয়নের প্রস্তুতির কাজ শেষ করতে পারেনি। কিছু কিছু স্টলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও রঙের কাজ বাকি আছে। এছাড়া ছোট ছোট স্টলগুলোর কাজও অসমাপ্ত।
মেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এখনও বেশিরভাগ স্টলের নাম দেয়া হয়নি। এছাড়া প্রায় ৩০ শতাংশ স্টলে রঙ, ডেকোরেশন, লাইটিংসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। কিছু কিছু স্টল সম্পন্ন হলেও পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। আর এ সব কাজ শেষ হতে আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে মনে করেন তারা।
বাণিজ্য মেলায় সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন নিরাপত্তা কর্মী মেলা প্রাঙ্গণে অনিরাপদ পরিবেশে দিন কাটাচ্ছে। মেলার আয়োজক ও ব্যবস্থাপক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আওতায় তারা সরকারি স্থাপনা ও মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকার পথে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এসব নিরাপত্তা কর্মী ঢাকা প্রপার্টি সার্ভিসের আওতায় চুক্তিভিত্তিক কাজ করছে। মেলার প্রবেশ পথের পাশে ফায়ার সার্ভিস স্থাপনার পেছনে এবং মসজিদ টয়লেটের পাশে টিনের একটি ছাপড়ায় থাকছেন তারা।
এদিকে মেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অস্থায়ী কার্যালয়ে বসার চেয়ার-টেবিল এখনো দেয়া হয়নি। এ অফিসটি ভিআইপি গেইটে মেলা সচিবালয়ের উল্টো পাশে অবস্থিত।
নিরাপত্তা কর্মীদের বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের অজুখানা ও টয়লেটের পাশে মেলার পশ্চিম দিকে টিনের সীমানা ঘেঁষে ওপরে তেরপাল, সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ঘিঞ্জি পরিবেশে কাঁচা মাটিতে তেরপল বিছিয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা বিশ্রাম নিচ্ছে।
তাদের দায়িত্বে থাকা ঢাকা প্রপার্টি সার্ভিসেসের সুপারভাইজার জোয়ারদার আলী বলেন, “আমরা ইপিবির সাথে চুক্তিতে মেলার সরকারি স্থাপনা ও ঢোকার পথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। মোট তিন সিফটে ৬০-৭০ জন কাজ করছি।”
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিজন যে কোনো সিফটে দৈনিক দশ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করছে। এ কার্যক্রম মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে।’
অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে থাকা-খাওয়ার বিষয়ে উন্নত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অস্থায়ী কার্যালয়ের বিষয়ে সংস্থার সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, ‘মেলায় ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতেই আমাদের এ কার্যালয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ অফিসের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেয়নি। আশা করি, এগুলো আজকের মধ্যে পেয়ে যাব।’
মেলায় তাদের কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আগত ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সকাল থেকে মেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবো। ভোক্তাদের যে কোনো অভিযোগ ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রিজভী আরো বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোক্তা অধিকার আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে অথবা জরিমানা করা হবে। এ কার্যক্রম সফল করতে এরই মধ্যে মেলায় যেসব রেস্তোরাঁ রয়েছে তাদের সবাইকে পণ্যের বিক্রয়মূল্যসহ তালিকা টানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি, উভয়পক্ষ আমাদের সহায়তা করবে।’
উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি শুক্রবার মাসব্যাপী ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ মোট ২২টি দেশ অংশ নিয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য বা টিকিট মূল্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য থাকছে ২০ টাকা করে। এ বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৫৩টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, জেনারেল প্যাভিলিয়ন ১০টি, রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন ৩টি, ফরেন প্যাভিলিয়ন ৩৮টি অন্যতম। এ ছাড়া থাকছে প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৬টি, জেনারেল মিনি প্যাভিলিয়ন ১৩টি, রিজার্ভ মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, ফুড স্টল ২৫টি, রেস্টুরেন্ট ৫টি। াংলামেইল২৪ডটকম