চন্দ্রাবতীকে চিঠি

লাইফস্টাইল ডেস্ক ॥ সময় টা এখন মধ্যরাত পেরিয়েছে, হাতে চায়ের পেয়ালা আর সস্তা দামের সিগেরেট বা বিড়ি যাই বলুন না কেন। আকাশ তা অন্ধকার হয়ে আসছে, কিছু সময় আগে চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো ওই দূরে। আপনাকে বলেছিলুম বোধ হয় একবার, চাঁদের আলোয় আমি চন্দ্রাহত, চন্দ্রগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আর যখন বিরহের সময় তখন তো চাঁদ যেন প্রেয়সীর মুখচ্ছবি।

যে শহর টাতে আমি বাস করি, আপনিও সেই শহরের বুকেই থাকেন, মাথার উপর এই বিশাল চাঁদ, কিন্তু দুজনের চাঁদ টাই আলাদা। একজন হয়তো দেখছে চাঁদের বুড়িকে অন্যজন চন্দ্রাবতীকে। কে যেন একজন বলেছিলো, চাঁদের চাঁদোয়ার একটা তীব্র চোখ ধাঁধানো আলো আছে, আমি আজ সেই আলো দেখছি। আপনার কন্ঠে শুনতে ইচ্ছে করছে ‘আজি জ্যোৎস্না রাতে সবায় গেছে বনে।’ আজ বসন্ত নয়, আজ হয়তো শ্রাবনের শুরুর দিককার কোন সময়। তবুও এই চাঁদ অনন্ত যৌবনা।

আবার উঁকি দিয়ে গেলো রুপসী চাঁদ। আপনার কথা স্মরণ করে, সিগেরেটের শেষাংশ টুকু রেখে দিচ্ছি, আবার টানবো। সে যা বলছিলাম, এক আকাশের নিচে দুটো মানুষ, কতো দূরে, এই মুঠো ফোনের যুগেও আপনার আমার মাঝে কয়েক যুগের দূরত্ব। আপনি চাইলে এই দূরত্ব ঘুচে যাবে অথবা ঘুচবে না কোন দিন ও। তবুও আমি থাকবো, এখানেই থাকবো…।

সম্পর্কের টানা পোড়নের আধুনিক রূপ টি আমার সে ভাবে জানা নেই, তবে লৈকিক রূপ টি দেখেছি, ইউসুফ জুলেখা, সিরি ফারহাদের মাঝে। সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনে আধুনিক মজনু আজ মরে না, নেশা করে। আমি মজনু হতে পারি নি, আমি ফারহাদ হয়েছি। আমার হাতে হয়তো সেই মাটি আজ কথা বলে না, আজ আমার হাতের কলম কথা বলে। আজ সে ফারহাদের মতোই সৃজনী শক্তির অধিকারী। ফার্সি কবি জামী তাঁর ইউসুফ জুলেখা কাব্যে লিখেছিলেন,

“ইশ্বর! হে ইশ্বর! পূর্ণ করো কামনা—

এ কবর যেন প্রস্ফুটিত ফুল হয়ে ওঠে

তার ঠোটে যেন উদ্যানেরি হাসি দেখতে পাই,

আর তার মদুর সৌরভে আপ্লুত হয় হৃদয়মন।”

মূল ফার্সিতে বলতে গেলে, এরকম লাগে,

“…ইলাহী গুনচা-ই উম্মিদ বচুকায়

গুলে অজ রওজা-ই জাবিদ বনুমায়

বখন্দান অজ লব-ই আন গুনচা বাগম

অয়াজ আন গুল এতর-পরোয়ানা কুন দিমাগম।।”

খুব হালকা শোনালেও এই শায়েরীতে আছে এক আবেগ। হয়তো সেটা আপনি অনুভব করতে পারবেন না অথবা পারবেন। শহরের সব বাতি নিভে যাচ্ছে, আমার চোখ ও ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে, চাঁদ ও হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে, এই মহাকাল সব কিছুই খেয়ে নিচ্ছে। শুষে নিচ্ছে আমাদের ভেতরের ভালো মানুষ গুলোকে। আজ হয়তো আপনাকে নিয়ে লিখছি, আমি আপনাকে কখনো ভুলতে চাই না বলেই লিখছি। আরো লিখবো। লিখতেই থাকবো আমার অর্থহীন কথাগুলো। শেলী লিখেছিলেন,

“ঙঁৎ ংবিবঃবংঃ ংড়হমং ধৎব ঃযড়ংব ঃযধঃ ঃবষষ ড়ভ ংধফফবংঃ ঃযড়ঁমযঃ.”

এর কাব্য করলে দাঁড়ায়,

“এ জীবনে যত মধুর গান

উৎসে বাজে বিষন্নতার সুর

জীবন পাত্র দুঃখে পূর্ণ হলে

সুর গুলো হয় আনন্দ মধুর।”

হয়তো সে জন্যই এই দূরে যাওয়া, দূরে থাকা। আপনার কাছে প্রেম মানে কি আমি জানি না। আমার কাছে প্রেম ইশ্বর। পবিত্র সেই অনাগত শিশুটির মতোই। এই সেই প্রেম যা আমাদের নিয়ে যাবে স্বপ্নের যৌথ খামারের দিকে। আমি আবার লিখবো, ভালো থাকবেন।

ইতি,

বীর বাহু অর্জুন।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫