শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ঘড়ি বিক্রি করে দারিদ্রতা জয় করেছে শারিরীক প্রতিবন্ধী জুয়েল

ঘড়ি বিক্রি করে দারিদ্রতা জয় করেছে শারিরীক প্রতিবন্ধী জুয়েল

শেয়ার করুন

তুহিন আহামেদ ॥
প্রতিবন্ধী বলে কারো দয়া দাক্ষিন্ন না নিয়ে নিজের প্রচেষ্টায় ঘড়ি বিক্রি করে দারিদ্রতা জয় করেছে শারীরিক প্রতিবন্ধী জুয়েল রানা (২১)। প্রতিবন্ধী জুয়েল রানা কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়া চালা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ী বি-বাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানাধীন চরলাপাং গ্রামে।
জুয়েল রানার সাথে আলাপ করে জানা যায়, তার দারিদ্রতা দূর করার ইতিহাস। জুয়েলের বাবা আঃ জলিল তার জন্মের পাঁচ বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক রাখালিয়া চালা এলাকায় এক খন্ড জমি কিনে সেখানে বসবাস শুরু করে ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৩ সালে জুয়েল জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু ভাগ্য দোষে দুটি পা-ই তার সমস্যা নিয়ে জন্ম হয়। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জুয়েল রানা সবার বড়। জুয়েল অবশ্য রাখালিয়া চালা এলাকার জামিয়া কাদেরিয়া মাহামুদিয়া মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ছোট বোন শারমিন আক্তার (১৫) উপজেলার সফিপুর গার্লস স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া (১০) উপজেলার হাজী মোঃ আবুল হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। বাবা আবদুল জলিল দিন মজুরের কাজ করে। মা গৃহিনী। মা-বাবা ও ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী জুয়েলের পরিবার। পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জুয়েল। তবে বাবা আঃ জলিল মাঝে মাঝে কাজ পেলে দিন মজুরের কাজ করে।
জুয়েল ২০০৩ সালে উপজেলার সফিপুর বাজারের ঘড়ি ব্যবসায়ী মৃত. মাহাবুব হাসানের দোকানে থেকে তার কাছেই ঘড়ি মেরামতের হাতেখড়ি। এরপর ২০০৬ সালে জুয়েল রানা কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সফিপুর বাজারে ঘড়ির ব্যবসা শুরু করে। আর সেখান থেকে যে কয় টাকা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতো। বর্তমানে এ ঘড়ির ব্যবসা এবং ঘড়ি মেরামতের কাজ করে সংসারের সকল খরচ, ছোট দুটি ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচসহ সমস্ত কিছু এখন জুয়েল বহন করছে।
জুয়েল রানা আরো জানায়, প্রতিবন্ধী বলেই আমাকে অনেকেই অবহেলা করতো। কিন্তু আমি কখনো কারো কাছে দুটি টাকার জন্য কিংবা একটু সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাত পাতিনি। আমি মনে করতাম আল্লাহ আমার পা দুটি স্বাভাবিক মানুষের মতো না দিলে কি হবে কিন্তু আমার হাত দুটিতো কাজে লাগাতে পারি। তাই নিজের ইচ্ছে আর মনোবল নিয়ে আমি ঘড়ি মেরামতের কাজ শিখি। আর এ কাজ শিখে এখন আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে আছি। এর আয়ের উপর নির্ভর করে আমার ছোট বোন ও ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ, সংসারের সকল খরচ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তবে দেশের সচেতন মানুষের কাছে আমার একটাই চাওয়া- আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি তাদের প্রতি একটু সুনজর দেন। তবেই হয়তো অনেকে প্রতিবন্ধী হয়ে অন্যের কাছে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে আমার মত কাজ করে খেতে পারবে।
দেশের সচেতন মহলের কাছে আমার দাবি আমার বাবা একজন দিন মজুর। তবে সে গার্মেন্টেসে চাকুরী করতো। সে একটি ফ্যাক্টরীর ডাইং অপারেটর ছিল। তাকে যদি কোন একটা কাজ দেয়া হয় তাহলে আমার পরিবার আরো একটু সচ্ছলভাবে চলতে পারবে।