বিল্লাল হোসেন
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ॥
নরসিংদী: মজুরিসহ ৯ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শিল্প এলাকার বাংলাদেশ জুটমিলের উৎপাদন। সোমবার ভোর ৬টা থেকে এ মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
ভোরে মিলের নোটিশ বোর্ডে বাংলাদেশ জুটমিলের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক নোটিশ টানিয়ে উৎপাদন বন্ধ করা হয়। নোটিশে জানানো হয়, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, সব বকেয়া মজুরি, বেতন প্রদানসহ ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোমবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিলের উৎপাদন বন্ধ করে ধর্মঘট পালনসহ প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ দিকে ১১ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি এবং তিন মাস বন্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন। এতে মিলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকÑকর্মচারী ও কর্মকর্তা অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন।
এ দিকে শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকালে ধর্মঘট শুরু করে খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে মিলের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে প্রধান ফটকের সামনে মিলের সিবিএ সভাপতি ইউসুফ সরদারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ নন-সিবিএ সম্মিলিত পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ জুটমিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান, সিবিএ সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সাহেব আলী, যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
মিলের ফিনিশিং বিভাগের শ্রমিক রাশেদ, কারিগরি বিভাগের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্কশপ বিভাগের শ্রমিক কবির হোসেন জানান, ১১ সপ্তাহ ধরে মজুরি না দেয়ায় অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতে সাহরি খেয়ে না খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে আমাদের।
কান্নাজড়িতকণ্ঠে শ্রমিকরা জানান, বাজারের কোনো দোকানদারও আর আমাদের বাকি দিচ্ছে না। অথচ আমরা মজুরি না পেয়েও মিলের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছিলাম।
মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইউসুফ আলী জানান, ৫২০ তাঁতের এই জুটমিলটিতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এক সময় বাংলাদেশ জুটমিলটি দেশের অন্যতম লাভজনক জুটমিল ছিল। কিন্তু বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে মিলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে গিয়ে আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই মিল বন্ধ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমরা বিজেএমসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিজেএমসি বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ জুটমিলের মহাব্যবস্থাপক মো: গোলাম রব্বানীর সাথে কথা বললে তিনি মিলের উৎপাদন বন্ধের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে বিজেএমসির সাথে কথা বলে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করছি।