স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানহীন (নন-কম্প্লায়েন্স) কোনো কারখানা মালিক ঋণ পাবেন না, এমন ঘোষণাতেই শেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ।
সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান প্রকাশ্যে বলেন, ‘মানহীন কোনো পোশাক কারখানাকে ঋণ দিলে শাস্তির আওতায় আনা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে।’
তার সেই বক্তব্যের আড়াই মাস চলে গেছে। কিন্তু কার্যকর একটি পদপেও নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এমন অর্থায়নে যাচ্ছে কিনা, তাও তদারকিতে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প।ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এমন তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, ড. আতিউর রহমানের ওই বক্তব্য বাস্তবায়নে কার্যকর একটি পদপেও নেওয়া হয়নি। ওটি শুধুই ঘোষণা। সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিছক বলা ছাড়া কিছুই হয়নি।
সূত্র বলছে, রানা প্লাজা ধসের পর গভর্নর ২৮ এপ্রিল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, মানহীন কোনো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে কোনো ব্যাংক কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা বা ঋণ দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশেও এ ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব একেএম রফিকুল ইসলাম। এরপর একাধিকবার তিনি একই কথা বলেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গভর্নর প্রকাশ্যে এমন কথা বললেও আমাদের এ ব্যাপারে কোনো দিক-নির্দেশনা অদ্যাবধি দেননি তিনি। আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও তাই এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই আজ পর্যন্ত হাতে নেওয়া হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেও তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখা তদারকি করতে পারবে না। সেই সামর্থ্য এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই।’
সূত্র জানায়, এ যাবতকালে এ সব কারখানা মালিক কী পরিমাণ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন, তারও কোনো তথ্য কোনো ব্যাংকের কাছেই চাওয়া হয়নি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প।ে
সূত্র জানায়, নিম্নমানের কোনো পোশাক কারখানায় ঋণ বন্ধে অদ্যাবধি একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একটি শাখাও পরিদর্শন করা হয়নি। একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের ঋণে ব্যাপক অনিয়মের পর বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, রানা প্লাজা ধসের পর সেখানে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকদের চাকরির প্রকাশ্য ঘোষণা দেন গভর্নর। তার সঙ্গে একই ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। কিন্তু, সেই উদ্যোগও আর বেশি দূর এগোয়নি।
গভর্নর ড. আতিউর রহমান এক অনুষ্ঠান শেষে সম্প্রতি বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই আমরা তাদের সংবর্ধনা দেবো এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরিও নিশ্চিত করা হবে।’
এ ব্যাপারে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘গভর্নরের কথা আমরা বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে শুনেছি। কিন্তু, আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি বা নির্দেশনা আমরা আড়াই মাসেও পাইনি। তাই, তা পরিপালন করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো চলছি। রানা প্লাজায় ধস আমাদের জাতীয় জীবনে সুযোগ এনে দিয়েছে।’
সোনারগাঁও হোটেলের ওই অনুষ্ঠানে গভর্নর আরো বলেছিলেন, ‘আমি কঠোরভাবে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করে বলতে চাই, কোনো মানহীন পোশাক কারখানা ও এর মালিকদের ঋণ দেবেন না। তাদের একটি টাকাও দেবেন না। এর ব্যত্যয় হলে, আপনাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে।’