স্টাফ রিপোর্টার:
গাজীপুর: বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) গাজীপুর কার্যালয় দুর্নীতি আর জনগণকে হয়রানির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঘুষ না দিলে এখানে কোনো কাজ হয় না। দালাল পরিবেষ্টিত এ অফিসে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের বিশ্বস্ত দলালচক্র তৈরি করেছেন তাদের কাছে জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বিআরটিএর কার্যালয়গুলো। টাকা ছাড়া সেবা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে শুধুমাত্র অফিস প্রধানের নাম দেওয়া দালালকেই আটক করা হয়। তবে এর ফলে দালালদের দৌরাত্ম্যের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়না। আর বরাবরের মতো এসব বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের চিহ্নিত দুই দালাল শান্ত এবং ছাত্তারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল দেয় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)। মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানের পোষা দালাল শান্তকে আঁটকের পর পাল্টে যায় গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার চিত্র।
বিআরটিএ সার্ভারের ডিসিটিভি রেজাল্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় শান্ত আটকের পরে পরবর্তী ড্রাইভিং লাইসেন্স লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে জানুয়ারি ১৪ তারিখ। ঐদিন গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে ২২০ জন লাইসেন্স প্রত্যাশী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যারমধ্যে মাএ পাঁচজন পরীক্ষার্থী পাশ করে। অংশগ্রহণকারী বাকি সবাইকে কাকতালীয়ভাবে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসাথে এত পরীক্ষার্থী এর আগে কখনো গাজীপুর অফিসে ফেল করানো হয়নি।
একাধিক দালাল বলেন, শান্তকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটকের পরেই একসাথে এতজন পরীক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দেন অহিদুর রহমান। এরপরবর্তী ড্রাইভিং লাইসেন্স লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে জানুয়ারি ১৮ তারিখ। ঐ দিন ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিলো ২২১ জন পরীক্ষার্থীর। তবে এর আগের পরীক্ষায় এতজনকে একসাথে ফেল করিয়ে দেওয়ার কারণে বেশিরভাগ দালালরা তাদের মাধ্যমে করা পরীক্ষার্থীকে সেদিন উপস্থিত করায়নি।
জানুয়ারি ১৮ তারিখ রেজাল্ট শীট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ১০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং ৬৪ জন পরীক্ষার্থী পাশ করে। মাএ তিনদিনের ব্যাবধানে রেজাল্টের এমন তারতম্য বুঝিয়ে দেয় গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে দালালদের গুরুত্ব কতটা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশের জন্য ২০০০ টাকা ঘুষ নিয়ে থাকে। আর এই টাকা তিনি দালাল শান্ত এবং লিমনের মাধ্যমে নিয়ে থাকে। দালাল শান্ত এবং লিমন অহিদুর রহমানের সহযোগী হিসেবে সকল কাজ করে থাকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স লিখিত পরীক্ষার দিন সকালে শান্ত এবং লিমন দালালদের সংকেত দিয়ে লার্নার রোল নং এর শীট চিহ্নিত করে দেন। এরপর লিখিত পরীক্ষা শেষে শান্ত এবং লিমন খাতা দেখে। সেখানে তারা দুজন সেসব সংকেত দেয়া খাতা পাশ না করলেও লিখে পাশ করিয়ে দেয়। অভিযোগ রয়েছে যারা কোন দালাল ছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর দিনশেষে রোল নং অনুযায়ী দুই হাজার করে টাকা আদায় করে শান্ত এবং লিমন মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানকে বুঝিয়ে দেন। দালাল শান্ত পনেরো দিন কারাবাস শেষ করলে মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান পুনরায় তার দায়িত্ব তাকে বুজিয়ে দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল খাটা একজন দালালকে দিয়ে তিনি পুনরায় লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখানো শুরু করেন। আর এ সুযোগে এইসব দালালের মাধ্যমে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আবু নাঈম এবং মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অহিদুর রহমানের এতসব অপকর্ম চোখের সামনে হলেও অফিস প্রধান হিসেবে কোন ব্যবস্থা নেননা তিনি। কারণ এসব ঘুষের টাকার একটা অংশ নীরবে ভাগ নেন তিনি। একটি নিদিষ্ট সূএ জানায়, অহিদুর রহমানের এসব অপকর্ম চালিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খুশি রাখার দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিদর্শক আবু নাঈম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে সহকারী পরিদর্শক আবু নাঈম বলেন, দালাল দিয়ে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখিয়ে অহিদুর রহমান বিশাল অন্যায় করেছেন। আমি তাকে শোকজ করবো।
গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য নিতে এবং জানতে বিআরটির পরিচালক (প্রশাসন) মো: আজিজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।