শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল

ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ পর্যটক এবং রাজদূত এডওয়ার্ড লিয়ার আগ্রার তাজমহল দেখে বলেছিলেন, আজ থেকে বিশ্ববাসীকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হোক। একটা শ্রেণি যারা তাজমহল দেখেছে এবং আরেকটি শ্রেণি যারা দেখেনি। তার এই উক্তিটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তার উক্তির জন্যই নয়, আরও অনেক কিছুর জন্যই তাজমহল দেখে আসতে পারেন।

মোঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত এই অনন্য স্মৃতিসৌধ সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের প্রতি ভালবাসার প্রতীক হয়ে জ্বলজ্বল করছে। শাহজাহান ও মমতাজ মহল-এর মধ্যে ভালবাসা এত গভীর ছিল যে, রাজকার্য থেকে শুরু করে সামরিক অভিযান পর্যন্ত মমতাজ ছিলেন তার স্বামীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তাদের সংসার জীবন ছিল আঠারো বছরের এবং এর মধ্যে তাদের ১৪টি সন্তান লাভ করে।
সর্বশেষ সন্তান জন্মলাভের সময় ১৬৩০ সালে বোরহানপুরে সম্রাট শাহজাহান-এর সঙ্গে এক সামরিক অভিযানে অবস্থানকালে মমতাজ মহল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে শাহজাহানের কাছ থেকে মমতাজ চারটি প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন। এর একটি সম্রাট শাহজাহান তাদের ভালবাসার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য একটা সৌধ নির্মাণ করবেন।ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল
মমতাজের মৃত্যুর পর তাকে তপতী নদীর তীরে বোরহানপুরের জয়নাবাদ বাগানে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর ৬ মাস পর মমতাজ মহলের মৃতদেহ আগ্রায় নিয়ে আসেন সম্রাট। সম্রাট শাহজাহান ১৬৩১ সালে সৌধ নির্মাণের জন্য ডিজাইন আহ্বান করেন এবং ওই বছরই তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
২০ হাজার লোকের ২২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৬৫৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে তাজমহল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্থাপত্য নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি যার বর্তমান হিসাবে ৪০ লাখ পাউন্ড এবং এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৬৪৮ সালে।
ইতিহাসবিদদের মতে, তাজমহলের নির্মাণকাজ ১৬৩১ সালে শুরু হয়ে ১৬৫৩ সালে শেষ হয়েছিল। দিল্লি, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ রাজমিস্ত্রিদের তাজের নির্মাণকাজে নিয়োজিত করা হয়। এছাড়াও বাগদাদ, শিরাজ এবং বোখারার অনেক দক্ষ মুসলিম নির্মাতা তাজের বিশেষ কাজগুলো করেন। নির্মাণকাজের দলিলে উল্লেখ আছে, তাজের প্রধান স্থপতি ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত মুসলিম স্থপতি ওস্তাদ ঈসা। একটি বর্গাকার ক্ষেত্রের প্লাটফর্মের মোড়ানো চৌকোনার ওপর অসমান অষ্টভুজাকৃতির আকার ধারণ করেছে তাজমহল।ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল
তাজমহল তৈরি হয়েছে সারা এশিয়া এবং ভারত থেকে আনা বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে। নির্মাণকাজে ১০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। আলো প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে। ইয়াশম, লাল, হলুদ বা বাদামি রঙের মধ্যম মানের পাথর পাঞ্জাব থেকে, চীন থেকে সাদা সবুজ পাথর ও বিভিন্ন রঙের স্ফটিক টুকরো। তিব্বত থেকে বৈদূর্য মণি, সবুজ-নীলাভ (ফিরোজা) রঙের রতœ এবং আফগানিস্তান থেকে নীলকান্তমণি আনা হয়েছিল। নীলমণি (উজ্জ্বল নীল রতœ) এসেছিল শ্রীলঙ্কা থেকে এবং রক্তিমাভাব, খয়েরি এবং সাদা রঙের মূল্যবান পাথর আনা হয়েছিল আরব থেকে। মোট আটাশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরের ওপর বসানো রয়েছে।ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল
এ চমৎকার সমাধিসৌধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। গেট পেরিয়ে তাজমহলের মূল সৌধের কাছে যেতে বেশকিছু পথ হাঁটতে হয়। নিচ থেকে ২১টি সিঁড়ি পার হয়ে তাজমহলের মূল বেদীতে প্রবেশ করতে হয়। কথিত আছে, পৃথিবীতে যাতে দ্বিতীয় কোনো তাজমহল গড়ে না ওঠে সেজন্য সম্রাট শাহজাহান কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন এবং অন্ধ করে দিয়েছিলেন।
ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল

কখন যাবেন
আগ্রা যাওয়ার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। খুব গরমে আগ্রা না যাওয়াই ভালো।

যা খাবেন
এখানে বিরিয়ানি, বিভিন্ন মোগলাই খাবার খেতে পারেন।
ঘুরে আসুন আগ্রা, দেখে আসুন তাজমহল

যেভাবে যাবেন
দিল্লী থেকে ট্রেনে ২১০ কিলোমিটার দূরে আগ্রায় যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে করে দিল্লী যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন
এখানে বিভিন্ন মানের এবং দামের হোটেল আছে। পছন্দ মতো হোটেল বুক করে নিন। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক