শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > গৌরনদীতে মা-মেয়ের বিয়ে বাণিজ্য

গৌরনদীতে মা-মেয়ের বিয়ে বাণিজ্য

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ কৌশলে যুবকদের বিয়ে করে তাদের অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়াই হচ্ছে তাদের নেশা। তাদের কথার অবাধ্য হলে ঠুঁকে দেয়া হয় মিথ্যে মামলা। এনিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিস বৈঠক বসলেও মা-মেয়ের এ বিয়ে বাণিজ্য এখনো বন্ধ হয়নি। তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনের প্ররোচনায় প্রতারণার মাধ্যমে মা-মেয়ের রোষানলে অসংখ্য যুবকেরা নিঃস্ব হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদীর উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামে।

ওই গ্রামের প্রতারিত যুবক ও চাঁদশী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য হিরণ বেপারী বলেন, টিকাসার গ্রামের সেকেন্দার বয়াতির স্বামী পরিত্যক্ত কন্যা ও এক সন্তানের জননী জোসনা বেগম ও তার মা রেনু বেগমের একাধিকবার অসামাজিক কার্যকলাপের সালিস করি আমি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৫ অক্টোবর রেনুর বাবা বাড়ি পশ্চিম শাওড়া গ্রামে সালিসের কথা বলে মুঠো ফোনে ডেকে নেন। তাদের গৃহে পৌঁছার সাথে সাথে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে জোসনা ডাকচিৎকার শুরু করে। এক পর্যায়ে জোসনা ও তার মা এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবীকৃত টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যে নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার হুমকি দেয়।

মান ইজ্জতের ভয়ে আমি নগদ ৬০ হাজার টাকা দেই। টাকা পাওয়ার পরেও ওই রাতে জোসনা বাদী হয়ে গৌরনদী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর চাঁদশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাক্কানী আলমের বাড়িতে সমঝোতার বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে জোসনাও তার ভাড়াটিয়া লোকজনে আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে’।

চাঁদশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাক্কানী আলম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জোসনা বেগম ৫ লক্ষ টাকা দাবি করলেও আমরা এক লক্ষ টাকার কথা বলে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু জোসনা তাতে রাজি হয়নি।

এরপূর্বে একইভাবে ঝালকাঠি সদরের পশ্চিম ঝালকাঠি গ্রামের আলম মুন্সীর ছেলে সোহাগ মুন্সীর সাথে কৌশলে বিয়ে করে জোসনা। কয়েকদিন পর ওই যুবকের অর্থকড়ি হাতিয়ে নিয়ে তাকে ডির্ভোস দেয়া হয়।

সম্প্রতি সাবেক সেনা সদস্যর কাছ থেকে প্রতারণা করে বিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় জোসনা। গত ২২ নভেম্বর কসবা গ্রামে সুমন মোল্লা নামের এক যুবকের সাথে চুটিয়ে প্রেম করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পরেছেন সু-চতুর জোসনা।

স্থানীয় হাসান ও নুর হক বলেন, জনতার হাতে ধরা পড়ার পর আমরা জোসনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

বানারীপাড়া উপজেলার আব্দুল হালিম মিস্ত্রী নামের এক প্রতারিত ব্যক্তি জানান, জোসনার মা রেনু বেগমের সাথে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রধরে গত সাত মাস পূর্বে তাকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক আটক করে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। এরপূর্বে প্রতারণার মাধ্যমে রেনু বেগমের আরো ৫টি বিয়ে হয়েছিলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া দুই বছর পূর্বে চাঁদশী একটি রাইস মিলে রেনুকে অসামাজিক কার্যকলাপের সময় এলাকাবাসী আটক করে। ভুক্তভোগীরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মা-মেয়ের রোষানল থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জোসনা বেগমের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিরন মেম্বর আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছেন। মোবাইল ফোন সেটে আপনার (জোসনার) অপকর্মের কিছু রেকর্ড আছে এবং সালিসগন ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে এ প্রশ্ন করলে সব মিথ্যে বলে মুঠো ফোনের লাইন কেটে দেন জোসনা।

অভিযোগের ব্যাপারে রেনু বেগম বলেন, ষড়যন্ত্র করে রাইচ মিলে আমাকে আটক করে। হালিম মিস্ত্রীর সাথে সম্পর্কের এক পর্যায়ে আমার সাথে বিবাহ হয়। একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালাচ্ছে।

চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মা-মেয়ের এসব বিষয় নিয়ে বহু বার সালিস করেছি। জোসনা ও তার মা রেনু বেগম যা করে তার চেয়ে পতিতারাও ভাল।

গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, জোসনা বেগমের নারী নির্যাতন মামলাটি তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।