বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয় গোপন ক্যামেরার নজরদারিতে আনা হয়েছে। এ দুই স্থাপনার আশপাশের সড়কগুলোর বিভিন্ন কৌশলগত পয়েন্টে এমন কিছু অত্যাধুনিক ক্ষুদ্র ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে যেগুলো সাধারণ চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম। এমনকি এসব ক্যামেরা রাতের আঁধারেও দারুণভাবে কার্যকর।
এছাড়াও খালেদা জিয়ার বাসা ও কার্যালয় এলাকায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। এসব গোয়েন্দা সদস্য শরীরের সঙ্গেও বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বহন করছেন বলে জানিয়েছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সম্প্রতি সবিচালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি চাকরির বিধিমালাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেওয়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এর প্রেক্ষিতেই সরকার ওই দুই স্থাপনা ও আশপাশের এলাকায় ক্যামেরার নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এতে সরকারি চাকরিতে থেকে সরকারি কর্মচারীদের প্রজাতন্ত্র বিরোধী তৎপরতা যেমন নজরে রাখা সহজ হবে, তেমনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গতিবিধিও লক্ষ্য রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিশেষ নজরদারির জন্য এমন সব অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপনের কথা ঝেড়ে অস্বীকার করেছে পুলিশ।
বংলানিউজের এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে গুলশান জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার নূরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের বাসা ও অফিসকে ঘিরে আমাদের কোন সিসি ক্যামেরা নেই। বর্তমানে এর প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না।
তবে তিনি এও বলেন, নিরাপত্তার জন্য সেখানে সার্বক্ষণিক পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারা দেখা করতে এলো বা কি নিয়ে আলোচনা হলো এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে গোয়েন্দা বিভাগ। তারা কোন ক্যামেরা ব্যবহার করে কি না তো আমি বলতে পারবো না।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় ও বাসা পর্যবেক্ষণে রাখেন এমন কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে তারা বলেন, সরকারিভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য কোন সিসি ক্যামেরা লাগানো নেই। অফিস ও বাসার সামনে তাদের স্থাপন করা নিজস্ব সিসি ক্যামেরাগুলো অনেক শক্তিশালী। এগুলো দিয়ে তারা নিজস্বভাবে মনিটরিং করে থাকে। আর এই মুহূর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সিসি ক্যামেরা লাগানোরও প্রয়োজন নেই।
তবে গোপন ক্যামেরা বহনের কথা স্বীকার করে তারা বলেন, আমরা কিছু ক্যামেরা চালু রেখেছি। এগুলোর সাহায্যে কারা খালেদা জিয়ার বাসা ও অফিসে আসছে বা যাচ্ছে তাদের ছবি ধারণ করা হবে।
তারা আরো জানান, এসব ক্যামেরা খুবই আধুনিক। কোনটা কলম আকৃতি, কোনটাবা পেপারক্লিপ আকৃতির। তবে এসব ক্যামেরার আকার প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে।
এছাড়া খালেদার অফিসের সব অনুষ্ঠানও ছোট ক্যামেরায় ধারণ করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। এর মাধ্যমে কারা খালেদা জিয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে তা মনিটর করা হচ্ছে।
তারা আরো জানান, যথাযথ মনিটরের কারণেই সচিবালয়ের ২২ কর্মকর্তার খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আসার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ সক্ষমতা আরো বাড়ানোর জন্যই গোপন ক্যামেরার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার ঘটনায় এরই মধ্যে জনপ্রশাসন বিভাগের যুগ্ন সচিব জাহাঙ্গীর হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
সরেজিমন খালেদা জিয়ার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এই দুই ভবনের বাইরের অংশে প্রায় ১৭টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চেয়ারপার্সন’স সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।
রাজনৈতিক কার্যালয়ের চারিদিকে প্রায় ১১টি ক্যামেরা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে কার্যালয়ে প্রবেশ পথের সামনে দু’টি করে চারটি ক্যামেরা রয়েছে। অবশিষ্ট ক্যামেরাগুলো রয়েছে বাউন্ডারির বিভিন্ন স্থানে। আর বাসভবনের সামনে রয়েছে ৩টি করে মোট ৬টি ক্যামেরা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম