বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > গাজীপুর সদর এসিল্যান্ড অফিস ডিজিটাল হাওয়া, ব্যাপক পরিবর্তন

গাজীপুর সদর এসিল্যান্ড অফিস ডিজিটাল হাওয়া, ব্যাপক পরিবর্তন

শেয়ার করুন

॥ আব্দুল হান্নান মোল্লা ॥
হঠাৎ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি), গাজীপুর সদর কার্যালয়ের নজরকাড়া ব্যাপক পরিবর্তন চমকে দেবার মত। এই অফিসটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অদূরে রাজবাড়ি সড়কের পাশে গাজীপুরে নির্মিত প্রথম জেলখানার অংশবিশেষ। জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে অবস্থিত। ঐ পরিত্যক্ত জেলখানার সামনের অংশের কয়েকটি পুরাতন কক্ষে চলে আসছে সহকারী কমিশনার (ভূমি), গাজীপুর সদর কার্যালয়ের কর্মকান্ড। সাদামাটা এই সরকারি অফিসের নজর কাড়ার মত আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য নেই। তবে সম্প্রতি চোখে পড়ার মত কিছু পরিবর্তন এসেছে। সৌন্দর্য বর্ধনসহ কাজের মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। এমন কি এই অফিসে ডিজিটাল হাজিরার কার্যক্রম উদ্বোধনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অপেক্ষা করছে।
মানুষের অতি মূল্যবান জমির মালিকানার ‘সনদ’Ñ নামজারী ও জমাভাগে’র মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চলে এখানে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই অফিসে এসে ভোগান্তি ও অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার মানুষের নানা দঃখ-কষ্ট, অভিযোগ,আর্তনাদ-যন্ত্রণার কান্নার ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে-বাতাসে প্রকমিপত হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। এই নেতিবাচকতার মঞ্চে হঠাৎ ইতিবাচক পরিবেশের স্বপ্নীল আলোর সম্ভাবনাময় ঝলক দৃষ্টি কড়েছে বাংলাভূমি কর্তৃপক্ষের। বদলে যাওয়া দৃশ্যপটে এই আমূল পরিবর্তনের কারণ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সাথে কথা হয় বাংলাভ’মি প্রতিবেদকের।
এই অফিসের কানুনগো মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, ৩৭ বছরের চাকুরি জীবনে অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। কিন্তু এসিল্যান্ড শারমিন আক্তারের কিছু বিশেষ যোগ্যতা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। তিনি দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া সহজতর করেছেন জনভোগান্তি কমানের জন্য। ভিড় বেশি হলে বেশিরভাগ সময় নিজ কক্ষের বাহির বারান্দায় প্রকাশ্যে কাজ করেন। আঙ্গিনায় দীর্ঘ সময় সেবাপ্রার্থীদের আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় না তাঁর সাথে দেখা করার জন্য। তিনি নিজেই জনগণের কাছে এগিয়ে গিয়ে সেবার হাত সমপ্রসারিত করেছেন। এ কারণে অতি সাধারণ মানুষও সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন খুব সহজেই। তাঁর চোখের আড়ালে কেউ যেন জনসাধারণকে হয়রানী না করতে পারে এজন্য তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসিল্যান্ড যখন  বারান্দায় বসেন তখন গোটা অফিস তাঁর প্রত্যক্ষ নজরদারীর আওতায় চলে আসে। এরকম মনিটরিং ব্যবস্থা কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতি বাড়িয়েছে। কমেছে অফিস আঙ্গিনায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী দালালের দৌড়াত্ম। মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে গুরুত্বের সাথে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করেন তিনি। সাক্ষাৎকারপ্রার্থীদের সন্তুষ্টির হারও এখন তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে নথিপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে যাচাই করে নামজারী ও জমাভাগের নথি অনুমোদন করেন তিনি।
গত ১ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেন শারমিন আক্তার। নামজারী কেসের মাসিক বিবরণীতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে পেন্ডিং কেস ছিল ২৬২২ টি। এ মাসে দায়ের হয় আরো ১৫১৮টি কেস। মোট ৪১৫০টি কেসের মধ্যে নিষ্পত্তিকৃত কেসের সংখ্যা ১৬৬২টি।  গত অক্টোবরে নিষপত্তিকৃত কেস ১৭৭১টি এবং চলতি নভেম্বরে এ যাবৎ নিষ্পত্তির কেস সংখ্যা ২৩৭৫টি। শারমিন আক্তার এ প্রসঙ্গে জানান, কাজের যে ভলিয়ম তাতে একজন এসিল্যান্ডের পক্ষে প্রতিমাসে দুই হাজারের বেশি কেস নিষ্পত্তি করা কঠিন কাজ।  এছাড়াও মিস কেস শুনানী, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা ও বিভিন্ন সভায় এসিল্যান্ডকে সময় দিতে হয়্। এ কারণে গাজীপুর সদরের কাজের চাপ কমাতে জেলা প্রশাসক আরেকটি সার্কেল অফিস করার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজকে আরও গতিশীল, হয়রানী ও দুর্নীতিমুক্ত করতে ‘ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিজিটাল সিস্টেম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। আগামী বছরের জুনে তা সম্পন্ন হবে। তাতে জনসেবার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে গত ২৬ নভেম্বর শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে খোলা আঙিনায় অষ্টভোজ আকৃতির বৃত্তাকার একটি বসার স্থান নান্দনিক নকশায় তৈরি করা হচ্ছে। এর নামÑ‘সেবা আঙিনা’। উন্মূক্ত গণশুনানীর কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। যার শতকরা ৯৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ওদিকে পুরানো জরাজীর্ণ রেকর্ডরুমটিকেও সংস্কার করে ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে। ফ্লোরে নথিপত্র স্তুপ করে সংরক্ষণ করা হতো এতোদিন। বর্তমানে ১২টি ষ্টিলের রেক তৈরি করা হয়েছে। বছরে গড়ে ২৫ হাজার নামজারী ও জমাভাগের নথী সংরক্ষণ করতে হয় এ অফিসে। বর্তমান পর্যন্ত গত তিন বছরের আনুমানিক ৭৫ হাজার নথি এই রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত আছে। রেকগুলোত যথাযথ পদ্ধতিতে এসব নথিপত্র সুবিন্যাস্ত ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে যাতে কোন নথি দ্রুত খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
অন্যদিকে, অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিজিটাল হাজিরার সব প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে এই অফিসের। তাদেরকে চেনার জন্য প্রত্যেককে পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে গলায় ঝুলিয়ে অফিস করার জন্য।  সব ঠিক থাকলে আগামীকাল ২৮ নভেম্বর সোমবার জেলা প্রশাসক এস. এম আলম ডিজিটাল হাজিরা ও সেবা অঙ্গনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন জানিয়েছেন শারমিন আক্তার। প্রসঙ্গতঃ এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট গাজীপুর সদর এসিল্যান্ড অফিস সহ কয়েকটি পৌর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। মূলত তখন থেকেই জেলায় এ সেক্টরে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশনকে এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের শুভ সূচনা হয়।