শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > সারাদেশ > গাজীপুরে ৮ বছরে ৬০১ জন শিশুর ক্লাবফুট রোগের চিকিৎসা প্রদান

গাজীপুরে ৮ বছরে ৬০১ জন শিশুর ক্লাবফুট রোগের চিকিৎসা প্রদান

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুরে গত ৮ বছরে ৬০১ জন শিশুকে ক্লাবফুট বা মুগুর পায়ের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের সহযোগিতায় দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের ওয়াক ফর লাইফ প্রজেক্টের মাধ্যমে এসব শিশুদেরকে বিনামূল্যে এ চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। ফলে জন্মগতভাবে পায়ের পাতা বাকা রোগে আক্রান্ত এসব শিশু জীবনব্যাপী প্রতিবন্ধিত্বের হাত থেকে রক্ষা পেল। গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এর অর্থোপেডিক সার্জারী ডিপার্টমেন্ট শিশুদের এ রোগের চিকিৎসায় সহযোগিতা করে আসছে । এ হাসপাতালের একটি কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে একটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে অর্থোপেডিকস সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ওয়াকিল আহমেদের তত্বাবধানে প্রতি বুধবার বিনামূল্যে ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের মুগুর পায়ের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬০১ জন শিশুকে চিকিৎসা প্রদান করে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গতকাল রোববার বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত র‌্যালীপূর্ব অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপক ও পনসেটি চিকিৎসক ডাঃ মোঃ জামিল হোসেন। শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আলী হায়দার খান প্রধান অতিথি হিসেবে এ র‌্যালিতে বক্তব্য রাখেন। এসময় শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ আসাদ হোসেন, হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডাঃ গৌরাঙ্গ বৈরাগী, অর্থোপেডিকস সার্জন ডাঃ ওয়াকিল আহমেদ, ডাঃ আনিসুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপক ও পনসেটি চিকিৎসক ডাঃ মোঃ জামিল হোসেন জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার শিশু ক্লাবফুট বা মুগুও পা নিয়ে জন্মায়, যার ফলে জন্মগতভাবেই শিশুর পা বাকা থাকে। চিকিৎসা না করালে মুগুর পা জীবনব্যাপী প্রতিবন্ধীত্ব সৃষ্টি করে। পনসেটি নামক জনৈক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রোগের চিকিৎসার জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা পনসেটি মেথড নামে পরিচিত। এ মেথডের মাধ্যমে এ রোগটির সহজ, সরল , সূলভ ও স্থায়ী চিকিৎসা সম্ভব। বাংলাদেশে বেসরকারী সংস্থা দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশন পরিচালিত ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্প বিনামূল্যে এ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
ডাঃ মোঃ জামিল হোসেন আরো জানান, ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পটি ২০০৯ সালের সেপ্টম্বর মাসে যশোর জেলা সদর হাসপাতাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রম সফল হলে গত ৮ বছর ধরে দেশব্যাপী ৪০ টি জেলায় সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে অবস্থিত ক্লিনিকের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের দ্বারা প্রায় ২২০০০ শিশুর পায়ের পাতার চিকিৎসা করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে মোট ৪৪টি পনসেটি ক্লিনিক রয়েছে ।
ডাঃ মোঃ জামিল হোসেন আরো জানান, ক্লাবফুট জন্মগত একটি রোগ হলেও সময়মত চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগটি সারিয়ে তোলা যায়। এ রোগে আক্রান্ত প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ শিশু চিকিৎসার মাধ্যমে ভাল হয়েছে। জন্মের পর পরই চিকিৎসা করালে মাত্র ৩ মাসেই এ রোগটি ভাল হবার কথা। তারপরও ৫ বছর পর্যন্ত শিশুকে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। তিনি জানান, গ্রামীন নানা কুসংস্কারের কারনে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সঠিক চিকিৎসা করান না। বড় হলে এসব শিশুরা প্রতিবন্ধিত্ব হয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদান করা জরুরী।
শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আলী হায়দার খান বলেন, এ রোগটি সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারনা রয়েছে। কিন্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে শিশুদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসাা যায় । সারা দেশের ন্যায় আমাদের এখানেও প্রতি বুধবার বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।