শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > গাজীপুরে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শহীদুলের ঘুষ বাণিজ্যের হাতিয়ার পিওন-ওমেদার

গাজীপুরে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শহীদুলের ঘুষ বাণিজ্যের হাতিয়ার পিওন-ওমেদার

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাকা খাবি খা, নাইলে ফাইলে সই কর। বয়স কম। বিসিএস দিয়া অইলো এসিল্যান্ড। ভূমির এখনো কিছু বুঝে না। আমরা এই লাইনে কাজ করতে করতে ঝানু হইলাম। আমগর চেয়ে তো বাস্তবে বেশি বুঝে না। হের বিরুদ্ধে সাম্বাদিকরা এতো লেখা-লেখি করলো; তারপরও কেন ডিসি সাব বদলী করলো না। একশ ফাইল পাঠাইলে ৮/১০ টা সই অয়। বাকী গুলো বাতিল করে। পাবলিকের যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। পাবলিক দু/চারটি টেহা দেয় কাজের জন্য, কাজ না অইলে তাদের কি জব দেই?
এই কথাগুলো বলে মনের জ্বালা প্রকাশ করেছেন গাজীপুর সদরের পূবাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম। তিনি গত ৭ জুন অফিস চলাকালীন তাঁর কার্যালয়ে এসব কথা বলেন।
অপরদিকে দেখা যায়, অফিসে কর্মরত ব্যক্তিরা সবাই অফিসিয়াল না। কে অফিসিয়াল কে ননঅফিসিয়াল তা বুঝা মুশকিল। নামজারী ও জমাভাগ করতে আসা বিভিন্ন জন বাক-বিতন্ডা করেন তাদের সাথে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অফিসে ১২জন বহিরাগত, তারা দালাল-ওমেদার ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা দৃশ্যত অফিসিয়াল ফুটফরমায়েস করার পাশাপাশি খারিজের দালালী করেন। এদের মূখ্য উদ্দেশ্য অফিস বস (কর্মকর্তা) -দের হয়ে খারিজ প্রার্থীদেরদের সাথে ঘুষের চুক্তি করা। তা থেকে কিছু নিজের পকেট করে বাকীটা বসদের দিয়ে খুশি করান।
একজন সেবা প্রার্থী জানান, পিওন ওমেদারদের হাতে ঘুষের টাকা অগ্রীম না দিলে ফাইলে সই করে না এখানকার ভূমি অফিসাররা।
কয়েকজন সেবা প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ অফিসের ওমেদারদের সাথেই এদের খারিজের চুক্তি হয়ে থাকে। দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যস্ততার ভান করেন। বাধ্য হয়ে পিওন ওমেদারদের সাথেই কথা বলতে হয়। তারা সব পারেন। বসরা তাদের কথায় উঠে-বসে।
ঘুষ চুক্তির আগে অফিসারদের সাথে সাধারণত কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায় না। তারা ব্যস্ততা দেখান। অফিসের ওমেদাররা আগ বাড়িয়ে কথা বলে সেবাপ্রার্থীদের সাথে। এই সুযোগে ঘুষের চুক্তিটাও সেরে ফেলেন। তারপর নথি ও সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রার্থী নিয়ে বসের সাথে কথা বলেন পিওন ও ওমেদাররা।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শহীদুল প্রায় এক বছর আগে কালীগঞ্জের জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে বদলী হয়ে এ অফিসে কর্মরত আছেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহী বিভাগের নাটোরে। নিয়ম ভঙ্গ করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গাজীপুর কোটায় চাকুরি নেয়। তিনি পিওন (এলএমএসএস) থেকে গ্রেডেশনে পদোন্নতি পেয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হন।
তিনি নাকি গাজীপুরের শহীদ মনু খলিফার মেয়েকে বিয়ে করেন। এ নিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের নাম প্রায় সময় অফিসে বসে চাউর করেন। মন্ত্রী নাকি এক নামেই তাঁকে (শহীদুল) চিনেন। মন্ত্রী তাকে ভীষণ ভালোবাসেন। উনার (মন্ত্রী) তদবীরেই নাকি ভাল স্টেশনে বদলী হয়ে আসছেন। এমন কথার বুলি আউড়ান শহীদুল অফিসে বসে বসে। একজন ভূমি সহকারীর এমন দাম্ভিকতায় কেউ কেউ বিব্রত বোধ করেন।
শহীদুল অফিসে এসব করে অফিসটি ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। সেবা প্রার্থীরা তাঁর এসব হাম্বরীতায় অনেকটা অসহায়।
অফিস সূত্রে জানা যায়, এ অফিসে কর্মরত আছেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম ছাড়াও দু’জন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন ও মেহেদী হাসান খান, পাঁচজন অফিস সহায়ক আবু সিদ্দিক, তাহমিনা, হাসান, তপন, ফিরোজ ; এর মধ্যে তপন ও ফিরোজ দু’জন ডেপুটেশনে। তাছাড়াও ১০জন ওমেদার রয়েছেন। এরা হলেন- বাবু, মিলন, সজল, রাশেদ, আকতার, খোকন, মোহাম্মদ আলী, হানিফ, জহির, মমিনুল প্রমুখ।