বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > গাজীপুরে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত মেয়র জায়েদা

গাজীপুরে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত মেয়র জায়েদা

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি
নগরবাসীর প্রাণঢালা অভিনন্দনে অভিষিক্ত হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। সোমবার নগরমাতার অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছিল। মূল অনুষ্ঠানস্থল বঙ্গতাজ অডিটোরিয়াম হলেও নগরভবনসহ আশপাশ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
অভিষেক অনুষ্ঠানে মা-ছেলের আবেগঘন বক্তৃতাকালে মুর্হুমুহু শ্লোগানে মুখরিত প্রকম্পিত হয়ে উঠে নগরীর প্রাণকেন্দ্র বঙ্গতাজ অডিটোরিয়াম ও নগরভবনসহ আশপাশ এলাকা। বক্তৃতায় মেয়র জায়েদা খাতুন নগরবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিপুল ভোটে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগেও আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ছিলেন। এজন্য আমি ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে নগরবাসীর সেবা তথা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর নগরবাসী আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর উপহার দিতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’ অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে মেয়র নগর ভবনে গিয়ে তার আসনে বসেন। এসময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও পাশে ছিলেন। এসময় গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এসএম সফিউল আজম নতুন মেয়রের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। আগের দিন রোববার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এদিকে জায়েদা খাতুনের এ অভিষেক অনুষ্ঠানে জেলার কোনো এমপি বা মন্ত্রী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কোন বড় নেতাকে দেখা যায়নি।
অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বক্তৃতায় বলেন, ‘টঙ্গীতে নির্বাচনী প্রচারণাকালে আমার মাকে ইট-পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়েছে। বার বার বাঁধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি থেমে যাননি। ভোটের মাধ্যমে আপনারা এর জবাব দিয়েছেন। আমার মাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। মা-ও বলেছেন তার জীবনবাজী রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘জন্মের পর বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমি সংগঠনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্ব করার কাজটি শিখেছি। তিনি বলেন, কেউ শহরের ক্ষতি করবেন না। এ শহর রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কষ্ট করেছি। আবারও প্রয়োজন হলে মায়ের সঙ্গে থেকে এ সিটির জন্য কাজ করে যাবো।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এসএম সফিউল আজম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আব্দুল হান্নান, নির্বাচিত কাউন্সিলরগণ ও নগরীর বিশিষ্ট জনেরা।
সোমবার সকাল ৯টার পর হতেই নগরীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাড়িতে চড়ে এমনকি পায়ে হেঁটে নবনির্বাচিত মেয়রকে অভ্যর্থনা জানাতে বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এক পর্যায়ে পুরো এলাকা আনন্দ মিছিলে ছয়লাব হয়ে যায় এবং লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
নব নির্বাচিত মেয়র অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রবেশের সময় নগরবাসী দুই পাশ থেকে ফুল ছিটিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চে পৌছালে গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এসএম সফিউল আজম ও নির্বাচিত কাউলিররা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধারণ নগরবাসীও ফুল সিটিয়ে নগরমাতাকে শুভেচ্ছা জানান। পরে তিনি নগর ভবনে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করেন। এসময় উৎসুক নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর ভবনে ভিড় জমায়।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন।
৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত ও মেয়র পদ হারানো সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ছেলের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের কারণে মা জায়েদা খাতুনও ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। অবশেষে একটি ঋণগ্রহিতা কোম্পানীর জামিনদার হিসেবে ব্যাংকে ঋণ খেলাপী হওয়ার অজুহাতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থীতা বাতিল হলে মায়ের পক্ষেই ভোট যুদ্ধে নামেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন জায়েদা খাতুন বলেছিলেন, ছেলের প্রতি নগরবাসীর ভালবাসা প্রমাণ করার জন্যই তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নগরবাসী সেই ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। এজন্য তিনি ভোটার তথা নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে মেয়র জাহাঙ্গীরকে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে গোপনে ধারণ করা ঘরোয়া কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। তখন তার বহিষ্কারের দাবিতে গাজীপুরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের একটি অংশ। অবশেষে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলেও গেল সিটি নির্বাচনের আগে সাধারণ ক্ষমার আওতায় শর্ত সাপেক্ষে জাহাঙ্গীরকে দলে ফিরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। শর্ত ভঙ্গ করে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আবার গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে দল থেকে তখন আবার বহিষ্কার করা হয়।