“অনেকেই বাচ্চাদের সাথে স্কুলে আসেন না। এই সুযোগে স্কুল ফাঁকি দিয়ে তারা খাবারের দোকানগুলোতে আড্ডা দেয়। ইদানিং শহরে বেশ কিছু ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে। এই দোকানগুলো এত নিরিবিলি যে, কেউ সারাদিন বসে থাকলেও কোনো খবর পাওয়া যাবে না। এ ধরণের ফাস্টফুডের দোকান গুলোকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। অপরিণত বয়সে প্রেমে ব্যর্থ হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্তও হচ্ছে কেউ কেউ। তাতে পরিবারের শান্তিও নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এর সাথে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ারও নানা উপাদান ও যোগসূত্র রয়েছে”।
স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর মহানগরের আধুনিক ফাস্টফুড প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই হয়ে উঠেছে সামাজিক অবক্ষয়ের নিরাপদ অভয়ারণ্য। এ রকম অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ কারণে এগুলোর কদর বেশী উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের কাছে। এর বেশীরভাগ ক্রেতা-ভোক্তাই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। যারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে পছন্দের সঙ্গীকে নিয়ে এসব স্থানে আসে আড্ডা বা গল্পগুজব করতে। প্রকৃত অর্থে আপত্তিকর ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করার সুযোগ পাওয়াই এগুলোর মূল আকর্ষণ তাদের কাছে।
গাজীপুর জেলা শহরের জয়দেবপুর চৌরাস্তায় অসংখ্য ফাষ্টফুডের দোকান গড়ে উঠেছে। দিনদিন সংখ্যা আরো বাড়ছে। বিশেষ করে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, চান্দনা হাইস্কুল, গাজীপুর সিটি কলেজ, লিংকন কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রছাত্রীরা যাতে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে পারে সেজন্য দোকানের ভিতরে বিশেষ ভাবে সাজানো হয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে চান্দনা চৌরাস্তার রহমান শপিং মল এলাকায় একটি ফাস্টফুটের দোকানে এরকম চিত্র চোখে পড়ে। অত্যন্ত ছোট পরিসরের ওই দোকানে সিঙ্গেল ডাবল সব ধরনের খাবারের অর্ডার নেয়া হয়। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে দেখা গেছে, ইউনিফর্ম পড়া কতিপয় ছাত্র-ছাত্রী সেখানে অন্তরঙ্গ আড্ডায় গভীরভাবে মশগুল হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐসব প্রতিষ্ঠানে খাবারের মূল্য বেশী হলেও তেমন আপত্তি নেই তাদের। প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানোই মূখ্য বিষয় এখানে।
দেখা যায়, প্রতিটি দোকানের তালিকায় খাবারের মূল্য প্রায় একই রকম। তবুও কোন দোকানেই ক্রেতা সংকট নেই। বরং ওই সব দোকানে বসে খেতে হলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে হয়। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিক আওয়ার। এসময় ওইসব দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়।
এ বিষয়ে এক ক্রেতা নাজমুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে শহরের একটি ফাষ্টফুডের দোকানে গিয়েছিলেন তার বাচ্চার জন্য কিছু খাবার কিনতে। খাবার রেডি ও প্যাকেট করতে একটু সময় লাগে। এ সময়টায় তিনি দেখতে পান ফাস্টফুডের দোকানের ভিতরে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি ভীড়। ওই পরিবেশ দেখলে বুঝা দায়, ওটা ফাস্টফুডের দোকান না কি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন।
চান্দনা হাই স্কুলের একজন ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, “অনেকেই বাচ্চাদের সাথে স্কুলে আসেন না। এই সুযোগে স্কুল ফাঁকি দিয়ে তারা খাবারের দোকানগুলোতে আড্ডা দেয়। ইদানিং শহরে বেশ কিছু ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে। এই দোকানগুলো এত নিরিবিলি যে, কেউ সারাদিন বসে থাকলেও কোনো খবর পাওয়া যাবে না। এ ধরণের ফাস্টফুডের দোকান গুলোকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। অপরিণত বয়সে প্রেমে ব্যর্থ হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্তও হচ্ছে কেউ কেউ। তাতে পরিবারের শান্তিও নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এর সাথে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ারও নানা উপাদান ও যোগসূত্র রয়েছে”।
এ বিষয়ে সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক ও অন্যান্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে মতামত জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা অভিমত দেন, এসব রোধ করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ওইসব ফাষ্টফুডের দোকানে যেন আড্ডা দিতে না পারে সেজন্য সম্মিলিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।