শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > গাজীপুরে নকলনবিশদের লাগাতার কর্মবিরতি >ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

গাজীপুরে নকলনবিশদের লাগাতার কর্মবিরতি >ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নুরুল ইসলামকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় তাঁকে প্রত্যাহার করে পূর্বের পদে বহাল রাখার দাবিতে গাজীপুরের নকলনবিশরা চলতি বছরের প্রথম কর্মদিবস ৩ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে দাবী আদায়ের আগ পর্যন্ত।
নকলনবিশরা কর্মবিরতি পালন করায় নতুন দলিল নিবন্ধনসহ সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। টানা ১০ দিন ধরে কর্মবিরতি চলায় সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাজীপুর সদর ২য় যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলবিশরা জানান, কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অফিস সহকারী পেনশন-পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) যান। তিনি ছুটিতে যাওয়ার পর ওই পদে গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে নিম্নমান সহকারী নুরুল ইসলামকে সম্প্রতি অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি আখ্যা দিয়ে জেলার নকলনবিশ সমিতি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। নুরুল ইসলাম নুরুকে প্রত্যাহারের দাবিতে ৩ জানুয়ারি থেকে তাঁরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছেন।
নকলনবিশ সমিতির নেতারা জানান, একজন এক্সট্রা মোহরার দীর্ঘদিন কাজ করার পর অভিজ্ঞতার আলোকে মোহরার পদে পদোন্নতি পান। পরে মোহরার থেকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পান। তাঁরা অভিযোগ করেন, ২০-২৫ বছর এক্সট্রা মোহরার হিসেবে কাজের পর অফিস সহকারী পদটি অনেক কাঙ্খিত। সিনিয়র মোহরারদের বঞ্চিত করে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নিম্নমান সহকারী নুরুল ইসলামকে কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অফিস সহকারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী নুরুল ইসলামকে গাজীপুর জেলা কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনা না হলে অবস্থান কর্মসূচিসহ আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
জেলা রেজিস্ট্রার জিয়াউল হক জানান, নূরুল ইসলামকে কালীগঞ্জ অফিসে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মোহরাদের মধ্য থেকে একজনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ-সংক্রান্ত চিঠি সোমবার (১১ জানুয়ারি) মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বিভাগের (আইজিআর) কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নকলনবিশদের সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের দাবিতে প্রথমে গাজীপুরে সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের নকলনবিশরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। পরে জেলার সাত শতাধিক নকলনবিশ ওই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এতে জেলার সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোতে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। নকলনবিশরা কোনো দলিলের নকল এবং দলিল সরবরাহ করেছেন না। তাঁরা দলিল বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করা থেকেও বিরত রয়েছেন। ফলে প্রতিদিন শত শত লোক রেজিস্ট্রি অফিসে এসে দলিলের নকল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জমির দলিলের নকল না পাওয়ায় জমির ক্রেতা-বিক্রেতারাও বিপাকে পড়ছেন।
এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার জিয়াউল হক এবং তার প্রধান অফিস সহকারী আপেল। নূরুল ইসলাম নিম্নমান সহকারী পদে চাকুরি নেয়ার সময় ১৪ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে বলে অফিসে গুনজন উঠে। এ টাকা উঠানোর জন্য নূরুল ইসলামকে গাজীপুর সদর ২য় যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীর চেয়ারে বসানো হয়েছে। নূরুল ইসলাম ওই স্থলে আসার পর গত ২০১৫ সালটি ছিল এ অফিসের রেকর্ড ভঙ্গের দুর্নীতি ও অনিয়ম। এর পিছনে কল-কাঠি নাড়াচ্ছেন জেলা রেজিষ্ট্রারের প্রধান অফিস সহকারী আপেল। আর আপেলের ভাবটা এমন তার কথায় জেলা রেজিস্ট্রার উঠ-বস। এদিকে জেলার বিভিন্ন নিকাহ রেজিস্ট্রাররা আপেলের প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের কথা চাউর করে যাচ্ছেন। নিকাহ রেজিস্ট্রাররা হয়রানীর ভয়ে আপেলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলার সাহস পাচ্ছেন না। তবে নকলবিশ ও নিকাহ রেজিস্ট্রাররা আপেলেরও প্রত্যাহারের দাবী করছেন।