রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > গাজীপুরে দুর্নীতিতে এগিয়ে রয়েছে ২টি উপজেলা ভূমি অফিস

গাজীপুরে দুর্নীতিতে এগিয়ে রয়েছে ২টি উপজেলা ভূমি অফিস

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গাজীপুর জেলার অন্যান্য ভূমি অফিসের তুলনায় কালিয়াকৈর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলা ভূমি অফিস এবং জেলা সদরের মির্জাপুর, বাসন ও শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতিতে এগিয়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
সরেজমিনে বিভিন্ন বেসাপ্রার্থীদের সাথে কথা হলে এ প্রতিবেদকে তাঁদের বিভিন্ন অভিযোগের কথা জানান। ঘুষের টাকা না দিলে অফিসে ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না, একাধিকবার নামজারীর আবেদন করতে হয়, আবার আবেদন করলে ফাইলটি বিভিন্ন অজুহাতে বাতিল করা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমনটা শুনান- আজ ব্যস্ত তিন দিন পর আসেন, তিনদিন পর গেলে শুনান- পরে আসেন ফাইলটি এখনো দেখা হয়নি। এ রকম ভাবে টেবিলে টেবিলে ঘুরতে ঘুরতে সেবাপ্রার্থী কান্ত হয়। তিক্ত-বিরক্ত হয়ে ঘুষের টাকা দিতে বাধ্য হয়। যখন চুক্তি ভিত্তিক ঘুষের টাকা দেওয়া হবে তখন ফাইলটি সুরসুরিয়ে অটোটে চলতে থাকে। ফাইলের পিছনে আর ঘুরতে হয় না।
চুক্তিটি হয়- ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে উপজেলা ভূমি অফিস পর্যন্ত। প্রতিটি স্বাক্ষরেই টাকা। একএক উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঘুষের রেড একএক রকম (জমির মূল্য ও গুরুত্বের উপর)। নামজারীর ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশের হিসাব। শহর কিংবা শিল্পাঞ্চলের জমির রেড বেশি। প্রতি শতাংশে ঘুষের চাহিদা সাধারণত ১ হাজার টাকা। মফস্বলের ঘুষের রেড আরো কম। এসব ক্ষেত্রে ভিআইপি তদবির আসলে ভিন্ন বিষয়।
একটি নামজারী জমাভাগে (খারিজে) ফাইল সম্পন্ন করতে ৬ কর্মকর্তা/কর্মচারীর স্বাক্ষর লাগে। প্রতি স্বাক্ষরেই টাকা। ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসের ক্ষেত্রে- সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। উপজেলা ভূমি অফিসের ক্ষেত্রে- সহকারী কমিশনার (ভূমি), কাননগো, সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীর।
তাছাড়া পিওন ও উমেদারদের ঘুষের নজরানা না দিলে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল নাড়ায় না। প্রতিটি আবেদনের প্রস্তাবনা তৈরি থেকে পুরো ফাইলটি তৈরি করে দেন একজন উমেদার। কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় তারা কাজ করেন।
উল্লেখ্য উমেদাররা বিনা বেতনে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ফুট-ফরমায়েশ করে। পারিশ্রমিক পান ঘুষের টাকার অংশ থেকে। ঘুষের টাকা নেয়া বা চুক্তিতে কাজ করা অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের রিক্সি। এ ক্ষেত্রে উমেদাররা কথা বা লেনদেন পাকা পুক্ত করেন। তবে অগ্রিম ঘুষের টাকা না নিয়ে কেউ ফাইলে হাত দেন না কিংবা স্বাক্ষর করেন না।
প্রতিটি অফিসে উমেদারের সংখ্যা ৬/৭ জন। তবে অফিসের গুরুত্ব ও ব্যস্ততার ভিত্তিতে উমেদারের সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে।
এ সব দুর্নীতির র‌্যাংকিং স্কোরে এগিয়ে আছে- কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিস এবং জেলা সদরের মির্জাপুর, বাসন ও শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
বাসন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আক্কাছ বলেন, ‘ভাই আমার অফিসে ঘুষের লেনদেন হয় না। ভাই আপনার সাথে দেখা করবো’।
মির্জাপুর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে অফিসে কোন ঘুষ লেনদেন হয় না’।
টেলিহাটী ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ ঘুষ লেনদেন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ এ বিষয়ে পরে জানাবো’ বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন’।
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন আলম সাথী এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার অফিসে লোকবল কম; ৭টি পদ শুন্য। কাজের চাপ বেশী। সেবাপ্রার্থীদের সঠিক সেবা দিতে কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তবে কোন ঘুষের অনিয়ম নেই’।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ আমার জানা মতে অফিসে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি নেই’।