শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > গাজীপুরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর আদায়ে অনিয়মের অভিযোগ

গাজীপুরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর আদায়ে অনিয়মের অভিযোগ

শেয়ার করুন


রোকুনুজ্জামান খান
স্টাফ রিপোর্টার:
গাজীপুর: জমির শ্রেণিমূল্য পরিবর্তন ও বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে।

তফসিল অনুযায়ী কর আদায়ে বাংলায় ১৪১৮ থেকে ১৪৩০ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মোট ১লাখ ৪হাজার ১৪৫টাকা কর দাবি থাকলেও ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ রশিদে দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪০ টাকা। এতে ৮৯ হাজার ৩০৫ টাকা সরকারি কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের গোপন তথ্য সূত্রে পাওয়া যায়, গাজীপুর সদর উপজেলার মাহনা ভবানীপুর—৩ নং মৌজার ৮৬২৫ হোল্ডিং নম্বরে ৫২১৯ আরএস দাগে মোস্তাফিজুর রহমান নামে ১৫৪ শতক চালা (আবাসিক) ও ৫২১৮ আরএস দাগে তাজুল ইসলাম নামে ৬৪ শতক সাইল (শিল্প) জমি। দুই জনের মালিকানায় মোট ২১৮ শতক জমি দেখানো হয়েছে। তাতে ১ বছরে ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ আদায় করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪০ টাকা।

অথচ এর আগে ৩৭৮ হোল্ডিং নম্বরে একই দাগে মোট ২১৮ শতক জমি যৌথ মালিকানায় মেসার্স নীট ওয়ার ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড নামে কারখানা রয়েছে। সেখানে বাংলা ১৪১৮ থেকে ১৪২৮ সাল পর্যন্ত বকেয়া এবং চলতি সাল পর্যন্ত ৩লাখ ৮হাজার ৯শ টাকা সুদ বাদ দিয়ে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সরকারি কর পরিষদের রেজিস্টার খাতা বা চালানের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এবং মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ—সহকারী কর্মকর্তা আবদুল জব্বার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেই জমির মালিকানা ও শ্রেণী পরিবর্তন করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করতে হয়। পরবর্তীতে যাচাই—বাছাই করে শুনানির মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা জায়, এ জমির উপর মেসার্স নীট ওয়ার ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড নামে একটি কারখানা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জানা যায় কারখানাটি গত ১৬/১৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয়। পরে কয়েক বছর কারখানাটি ভালো চললেও বর্তমান এটি বন্ধ রয়েছে। তবে এই কারখানার সীমানার প্রাচীরের ভিতর কোন আবাসিক বাসা বাড়ি বা ভবন দেখা যায়নি।

তবে যদি ২১৮ শতক জমি থেকে শিল্প কারখানার নামে কর আদাই করা হতো তাহলে ১৪ বছরে সরকারের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতো।

বাংলাদেশ রিভার এন্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানে যখন যৌথ মালিকানায় জমি থাকে তখন এক জনের কাছ থেকে আবাসিক এবং আরেকজনের কাছ থেকে শিল্প কারখানার নামে কর আদায় করা হচ্ছে। ভূমি কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শিল্প কাখানার মালিকদের এমন সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে করে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। যেখানে শিল্প কারখানা রয়েছে সেখান থেকে শিল্প কারখানার কর আদায় করা উচিত।

বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শিল্প মালিকদের সুবিধা দিচ্ছে। এতে করে সরকারের লস হচ্ছে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুদক যদি আরো কার্যকরী ভূমিকা নেয়, তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আর রাষ্ট্রের লাভ হবে।

গাজীপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা খাইরুন নেছা জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখার পর যদি অভিযোগ সত্যতা প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক জানান, যদি ভূমি অফিসের কোন কর্মকর্তা কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে। তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।