স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: খাদ্যশস্য গমের চাহিদা ও আমদানির পরিমাণ প্রতি বছরই দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সে অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ছে ধীর গতিতে। মোট চাহিদার চার ভাগের প্রায় এক ভাগ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে দেশ।
গমের চাহিদা, আমদানি ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ছয় বছরের ব্যবধানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে গমের আমদানি বেড়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ের ব্যবধানে গমের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র চার লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। আর জমির পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ৪১ হাজার হেক্টর। অবশ্য ২০০১-০২ ও ২০০২-০৩ এ দুই অর্থবছরে বর্তমানের চেয়ে জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ উভয়ই বেশি ছিল।
গবেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজি, রবি শস্য ও বোরো ধানের চাষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না গমের আবাদ। এদিকে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হলেও সে অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে গবেষকদের।
খাদ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়। গত অর্থবছর ২০১৪-১৫’তে আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ৮০৩ মেট্রিক টনে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র (বারি) গম গবেষণা উইং জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে আট লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন গত উৎপাদিত হয়েছে।
তবে গমের হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন থেকে ৩ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
বারি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে গমের চাহিদা প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টন। এর বিপরীতে বর্তমানে প্রতি বছর দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। ফলে গমের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করতে হয়।
বারি’র আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, গমের উৎপাদন বাড়াতে অবশ্যই গমের উচ্চফলনশীল জাত ও আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে আরও বেশি সম্প্রসারিত করতে হবে।
অপ্রচলিত এলাকায় গমের আবাদ বৃদ্ধি করে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেন এ গবেষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বলেন, আমরা উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন জাত মাঠে সম্প্রসারিত করতে একটু সময় দরকার।
তিনি জানান, চরাঞ্চলসহ কিছু এলাকায় গমের আবাদ বাড়ছে এবং তাপসহিষ্ণু জাতের গমের বিস্তৃতি ঘটছে। ফলে আগামী ২০১৮ সালের দিকে গমের উৎপাদন আরও অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
গম চাষে সম্ভাবনা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও রবি মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি পতিত থাকে, যেখানে গমের আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
যেমন: রাজশাহী, নওগা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চল, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বিশেষ করে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও নোয়াখালী (স্বল্প লবণাক্ত) এলাকায় একটি মাত্র সেচে লাভজনকভাবে গমের আবাদ সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে।
এসব এলাকায় প্রায় তিন থেকে চার হেক্টর জমিতে গম চাষ করা সম্ভব হবে। এতে বর্তমানের উৎপাদনের সঙ্গে অতিরিক্ত আট থেকে দশ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন বেশি আশা করা যায়। দেশের চরাঞ্চলেও গমের আবাদ সম্প্রসারণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
উঁচু এবং বেলেযুক্ত জমিতে বোরো ধান চাষে অতিরিক্ত সেচ প্রয়োজন হয়। এসব জমিতে বোরো ধান চাষের পরিবর্তে গম চাষ লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব।
বারি কর্তৃক এ পর্যন্ত ৩০টি উন্নত গমের জাত এবং ২টি ট্রিটিকেলি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০-০৫ সালে চারটি (শতাব্দী, প্রদীপ, বিজয় ও সূফী), ২০১০ সালে দু’টি (বারি গম ২৫ এবং বারি গম ২৬), ২০১২ সালে ২টি (বারি গম ২৭ এবং বারি ২৮) এবং সবশেষ ২০১৪ সালে আরো ২টি (বারি গম ২৯ এবং বারি গম ৩০) গমের জাত উদ্ভাবন করা হয়।