শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ‘গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থান নেই’

‘গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থান নেই’

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ আহ্বান জানান।
স্পিকার বলেন, ‘আমাদের সকল শক্তির আধার জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। জনগণ কখনোই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের কাছে পরাভব মানে না।’
তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশে এক নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। আন্দোলনের নামে নাশকতামূলক কার্যক্রম, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে নারী-শিশুসহ নিরীহ খেটে-খাওয়া মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হয়। বিগত ৮৫ দিনে ১৩০ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনিসহ চিফ হুইপ, হুইপবৃন্দ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধদের দেখতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘দেখেছি আগুনে পোড়া মানুষের দুর্বিসহ যন্ত্রণা, কান্না, আহাজারি। এই অসহায়ত্ব বর্ণনা করা যায় না। এ পৈশাচিক বর্বরতা, সহিংসতা, সন্ত্রাস কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থান নেই। গণতন্ত্র মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন, সমতা, সুশাসন এসব মূল্যবোধকে লালন করে। এসব চর্চার মধ্যদিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করাই হল গণতন্ত্র।
তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনায় রয়েছে ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।’
স্পিকার বলেন, কাজেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যদিয়ে শোষণ ও বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়ই সংবিধানের অন্যতম মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে মনে রাখতে হবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান। এ প্রেক্ষিতে তিনি ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দেন।
তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব আজ উন্নয়নের মূল দর্শন হিসেবে অর্থনৈতিক মুক্তি, শোষণ, বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলছে। আর সেই আলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার বলেন, সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এর সুফল ইতোমধ্যে দেশের জনগণ পেতে শুরু করেছে। দেশের দারিদ্র্য শতকরা ১০ ভাগ হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ৬ ভাগের উপরে রাখা সম্ভব হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার এবং রেমিটেন্স ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে। রফতানি আয়ও ৩২ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ মোকাবেলাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে এসব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশের অবারিত সম্ভাবনাকে রুদ্ধ হতে দেয়া যায় না। একে কাজে লাগাতে হবে। অমিত সম্ভাবনা তরুণ প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়তে হবে।
তিনি বলেন, কোন সহিংসতা, সন্ত্রাস বাংলাদেশের এগিয়ে চলার এ অদম্য গতিকে রোধ করতে পারবে না। সহিংসতা ও সন্ত্রাস বারবার এ জাতির চলার পথে বাধা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি এ প্রেক্ষিতে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কাল রাতে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড, ৩ নভেম্বর জেল হত্যা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জনগণ বারবার সন্ত্রাস নৈরাজ্য রুখে দিয়েছে।
স্পিকার বলেন, সকল বাধা ডিঙ্গিয়ে গণতন্ত্রের ধারাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ এ লক্ষ্য অর্জনে স্থির ও অবিচলভাবে এগিয়ে যাবে।