শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > খালেদাকে স্বাগত জানাবে তিনশতাধিক তোরণ

খালেদাকে স্বাগত জানাবে তিনশতাধিক তোরণ

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট ॥ আগামী ৫ অক্টোবর সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির মহাসমাবেশ। আর এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা সিলেটকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রায় প্রতিটি রাস্তায় টানানো হয়েছে রং বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ড। নগরীর অলি-গলিতে শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য তোরণ। নগরীর সবকটি দেয়াল ঢেকে গেছে পোস্টারে। জনসভার সময় যতো ঘনিয়ে আসছে ততো প্রচার প্রচারণা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিন নানা ব্যানারে চলছে মিটিং-মিছিল।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর এই প্রথম সিলেট আসছেন খালেদা জিয়া। দলের চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষ্যে চলছে প্রচারণার প্রতিযোগিতা। প্রবাসী নেতাদের ও সিলেটের বিভিন্ন আসনের মনোয়ন প্রত্যাশীরাও অংশ নিচ্ছেন প্রচারণায়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফর করে গেছেন। সে সময় সিলেটের বিভিন্ন বিলবোর্ড দখল করে প্রচার করা হয় ‘সরকারের সাফল্য’। একই কায়দায় এবার সেসব বিলবোর্ড দখল করে খালেদা জিয়ার জনসভার প্রচারণার জন্য ব্যানার ও পোস্টার লাগানো হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার এ সভা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়ন ও ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। বাস্তবে জনসভা ঘিরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ১৮ দলীয় জোটভুক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রচারণা এখন মুখ্য হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের টাকা দিয়ে ব্যানার, বিলবোর্ড, তোরণসহ বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজ চলাছে।’

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে নগরীর ভেতরে অন্তত তিন শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার প্লে-কার্ডসহ কয়েক লাখ পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার ভিআইপি সড়ক থেকে শুরু করে রোড ডিভাইডারসহ সোবহানীঘাট, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, লামাবাজার, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, উপশহর, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার ও সুবিদবাজারে শোভা পাচ্ছে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনের প্রচারপত্র। বিরাট আকারের ওই সব বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ইলিয়াস আলীর ছবির সঙ্গে বড় করে লেখা আছে ‘ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দাও…’।

বিলবোর্ড দখলে বাদ যাননি ছোট নেতারাও। বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতারাও যার যার মতো করে নিজের ছবি দিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার লাগিয়েছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ৫ অক্টোবর নগরীর চৌহাট্টা এলাকা সংলগ্ন আলিয়া মাদরাসা মাঠে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার কারণে ওই এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ব্যাপকভাবে সাঁটানো হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী, খন্দকার মুক্তাদীরসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নামে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। টুকেরবাজার তেমুখী থেকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর, এয়ারপোর্ট থেকে শাহপরাণ গেইট পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে অসংখ্য তোরণ।

তবে নিখাঁদ এই আনন্দের সময়ও শীর্ষ নেতারা অনেকটাই চিন্তিত। কারণ আলিয়া মাদরাসা মাঠে ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর খালেদা জিয়া শেষ জনসভা করেছিলেন। আর ওই জনসভার আর্থিক বাণিজ্যের কথা ছিল সবার মুখে মুখে।

জনসভা শেষে রীতিমতো প্রেস ব্রিফিং করে অভিযোগ করা হয়েছিল ওই জনসভার অন্যতম আয়োজক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন লেচু মিয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে ওই সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে এবং তার সাধারণ সদস্য পদও বাতিল করা হয়।

২০১১ সালে যখন আলিয়া মাদরাসায় খালেদা জিয়া জনসভা করতে আসেন তখন বহিষ্কৃত মকবুল হোসেন জনসভার প্রধান মঞ্চে আসন গ্রহণ ও বক্তব্য দেয়ার জন্যে এম ইলিয়াস আলীর দ্বারস্থ হন। শেষ পর্যন্ত মকবুল হোসেন প্রধান মঞ্চে জায়গা করে নিলেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আপত্তির কারণে জনসভায় বক্তব্য দিতে পারেননি। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মকবুল হোসেন লেচু মিয়া জনসভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিং করে এম ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। যা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

৫ অক্টোবরের জনসভাকে কেন্দ্র করে এরূপ পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ মহল সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।

এবারের জনসভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আয়োজক কমিটির দায়িত্বশীলদের হাতে বড় অংকের চাঁদা তুলে দিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সিটি মেয়র কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিলেও গুঞ্জন রয়েছে জনসভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি টাকা গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর যারা চাঁদা দিচ্ছেন তারাই এসব খবর বলে বেড়াচ্ছেন নিজেদের পরিমণ্ডলে। টাকা নিয়ে আয়োজকরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন বলেও তারা আশঙ্কায় রয়েছেন।

অপরদিকে প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয়ের কারণে সংক্ষুব্ধদের মাধ্যমে হাটে হাঁড়ি ভাঙা কিংবা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের আশঙ্কা নিয়ে চিন্তিত দলীয় নেতারা।

সিলেট বিএনপির সভাপতি এমএ হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুধু মঞ্চের টাকা কেন্দ্র থেকে আনা হয়েছে। আর বাকি অর্থ দলীয় নেতাকর্মীরা দিচ্ছে।’ তবে সমাবেশকে ঘিরে কোনো চাঁদাবাজী হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষ্যে সব ধরনে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।