আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য এই কয়লা আমদানির কথা ভাবছে জ্বালানি বিভাগ। এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে, এরমধ্যে ইন্দোনেশিয়াকেই পছন্দের তালিকার একনম্বরে রাখা হয়েছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
পাওয়ার সেলের পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ ইন্দোনেশিয়া। দ্বিতীয় হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, তৃতীয় পছন্দ হিসেবে রাখা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এই তিন দেশের মধ্যে যে দেশের কয়লা আমাদের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো হবে, সে দেশ থেকেই আমদানি করা হবে। প্রপার প্রকিউরমেন্ট প্রসেসের মাধ্যমেই এই কয়লা কেনা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে ৭৬ বিলিয়ন টন কয়লার প্রমাণিত মজুদ রয়েছে। এরমধ্যে ৫১ ভাগ কয়লা বিটুমিনাস শ্রেণির আর ৪৯ ভাগ কয়লা সাববিটুমিনাস শ্রেণির। ইন্দোনেশিয়াতে সম্ভাব্য মজুদের পরিমান ১৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন টন। তবে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন টন। ইন্দোনেশিয়ার কয়লার দাহ্যক্ষমতা কম। এর জলীয় অংশ বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লার পরিবহনব্যয় কম হলেও দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে সংশ্লিষ্টরা। তবে সব থেকে উন্নত কয়লা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশটির প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন টনের মধ্যে ৯৬ ভাগ উন্নত বিটুমিনাস শ্রেণির। কয়লায় সালফারের উপস্থিতি এক ভাগের নিচে।
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে ২০০ মিটারের জাহাজ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পরিবহন করতে পারে। এজন্য ১০ মিটার ড্রাফট (সাগরে পানির গভীরতা) থাকা উচিত। কয়লা পরিবহনে ৩০০ মিটার লম্বা জাহাজ ব্যবহার করলে ৮০ হাজার টন কয়লা আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ১২ মিটার ড্রাফট দরকার হবে। আর ৩৫০ থেকে ৪০০ মিটার লম্বা জাহাজে কয়লা আনলে একসঙ্গে দেড় লাখ টন আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে সাগরে ১৬ মিটার ড্রাফটের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, অর্থাৎ সাগরের গভীরতা ও রেল রাস্তার বিচার করলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা কয়লা বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রের জন্য আমদানির উপযুক্ত। চট্টগ্রাম থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। তবে মোংলা বা পায়রা বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করা হলে পানি পথে এর পরিহনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। তবে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে যে বন্দরই ব্যবহার করা হোক, গভীর সমুদ্র থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে খালাস করতে হবে। তবে মোংলা ও পায়রা এলাকায় লাইটারেজ জাহাজ রাখাও অনেকটা কঠিন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
দামের দিক দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার কয়লা ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে টন প্রতি ৮১ দশমিক ৫ ডলার ব্যয় হতো বলে ধারণা করা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে এই দর বাড়বে। ২০২০ সালে এর টন প্রতি দাম দাঁড়াবে ১০৩ দশমিক ৩ ডলার, ২০২৫ সালে দাম হবে ১২৫ দশমিক একডলার, ২০৩০ সালে ১৪৭ ডলার হবে। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে ২০৩৫ সালে ১৬৮ দশমিক ৯ এবং ২০৪০ সালে দাঁড়াবে ১৯০ দশমিক ৭ ডলার।
অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি কয়লা ২০১৫ তে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে টন প্রতি ৫৯ দশমিক ৭ ডলার ব্যয় হতো বলে ধারণা করা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে এই দর বাড়বে। ২০২০ সালে দাম দাঁড়াবে ৭৫ ডলার, ২০২৫ সালে হবে ৯০ দশমিক তিন ডলার। ২০৩০ সালে ১০৫ দশমিক ৩ ডলার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে ২০৩৫ সালে ১২১ এবং ২০৪০ সালে দাঁড়াবে ১৩৬ দশমিক ৪ ডলার।
এর আগ বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস শনিবার এক বৈঠকের পর বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা আমদানির সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি এ দিন বলেন, ‘কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জ্বালানি সংকট মেটাতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন