জাহিদ আহসান, শিক্ষানবিস রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: রাজনীতি নামক শব্দটি এখন আর জনগণের জন্য নয় তারপরও কিছু কিছু নেতা-কর্মীদের ত্যাগ রাজপথ কখনো ভুলতে পারে না। কেউ আসে স্বার্থ হাসিলে, কেউ আসে উদ্দেশ্য পূরণে, কেউ আসে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে আবার কেউ রাজনীতিতে আসে মন উজাড় করে মানুষকে ভালবাসতে। তাদের মধ্যে একজন জাতীয় পার্টি নেতা শেখ মোহাম্মদ মাসুদ। গণ্যমাধ্যমে রাজনীতিবিদদের বেপরোয়া লুটপাট, চাঁদাবাজির খবর প্রকাশ পেলেও কিছু কিছু নেতাকর্মী রয়েছে যারা প্রকৃত দেশসেবার জন্য রাজনীতিতে আসে। তাদের মধ্যে শেখ মোহাম্মদ মাসুদ একজন নির্লোভ, নিরহংকারী ও সাদা মনের মানুষ। ছোট বেলা থেকেই মানবসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়ে শুরু করেন রাজনীতি। ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন শেখ মোহাম্মদ মাসুদ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দে ভাসছে গাজীপুরবাসী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাদের মধ্যে শেখ মাসুদ ত্যাগী ও পরিশ্রমী। দুঃসময়ে পার্টিকে ভালোবেসে জনকল্যাণ করাই প্রকৃত রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর অনন্য বৈশিষ্ঠ।
১৯৯২ সালে তৎকালীন কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ শাখা ছাত্রসমাজের সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতি জীবনের সূচনা ঘটে শেখ মাসুদের। রাজনীতিতে যোগদানের পর পরই বিএনপি জোট সরকারের আমলে ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫ সালের একাধিক অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতেন শেখ মাসুদ, এর ফলে বার বার কারারুদ্ধ করা হয়েছিল সাহসী এই নেতাকে। কারাবরণের পরও দমে যাননি টিকে ছিলেন সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে। নেতৃত্ব গুণ ও ছাত্রসমাজের ভালোবাসা নিয়ে পরবর্তী নির্বাচিত হন গাজীপুর শহর ছাত্রসমাজের সভাপতি। ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি-জামাতজোট সরকারের অত্যাচারের জবাব দিতে গিয়ে পুনরায় কারারুদ্ধ হন শেখ মাসুদ। ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে শেখ মাসুদকে পরে ২০০৩ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজের গাজীপুর জেলার সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে পার্টিতে টিকে থাকার সুবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রসমাজের প্রথমে অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং পরে সহ-সভাপতি পদে উন্নতি লাভ করেন। ছাত্রসমাজের রাজনীতির পর কেন্দ্রীয় যুব সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমসাময়িক রাজনীতি বিষয় নিয়ে বাংলাভূমি’র প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় শেখ মোহাম্মদ মাসুদের। শেখ মাসুদ বলেন, আমার রাজনীতিতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা করা। পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পার্টিকে বেছে নিয়েছি জনগণের সেবার জন্য। পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শকে বুকে লালন করে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব বঞ্চিত মানুষদের পাশে থেকে।
অল্প বয়সে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মাসুদ বলেন, দেশ জাতির কল্যাণে যুবকের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাকে যোগ্য মনে করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দিয়েছেন পল্লীবন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সুযোগ্য ছোট ভাই পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের যুবক-তরুণদের নিয়ে দেশ ও জাতি গড়তে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গে শেখ মাসুদ বলেন, রাজনীতিক নেতাদের জনপ্রিয়তার মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা। মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে আমি সর্বদা তাদের পাশে থাকার চেষ্ঠ করেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব, এরই প্রতিদান হিসেবে বলতে পারেন জনপ্রিয়তা।
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, রাজনীতিতে পক্ষ-প্রতিপক্ষ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। সবার সাথে সহকর্মী, সহযোদ্ধা ও বন্ধু সুলভ আচরণ করার চেষ্ঠা করি।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বলেন, জিএম কাদের মহোদয়ের নেতৃত্বে আবারো জেগে উঠবে জাতীয় পার্টি। পল্লীবন্ধুর মতো গ্রাম ও শহরের দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে জাতীয় পার্টি।
গাজীপুরের রাজনীতি বিষয়ে এ নেতা বলেন, বিএনপি-জামাতজোট সরকারের বিরুদ্ধে ভাওয়াল রাজাখ্যাত, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার এবং কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। গাজীপুরের রাজনীতির মঞ্চে জাতীয় পার্টি সরকারের ভালো কাজে সহযোদ্ধা এবং খারাপ কাজে প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করে।
জানা যায়, শেখ মোহাম্মদ মাসুদ ‘গাজীপুর রিয়েল স্ট্রেট লিমিটেড’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তিনি বলেন, এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে একটি অংশ জনগণের কল্যাণ ও পার্টির কল্যাণে ব্যয় করে থাকি।
সর্বশেষ জনগণের উদ্দেশে শেখ মাসুদ বলেন, আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা, সহযোগীতা এবং সহমর্মিতায় আমি একটি অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। জীবনের শেষ দিন অব্ধি আপনাদের কল্যাণে কাজ করব। আমি সকলের দোয়া চাই।
এছাড়াও শেখ মাসুদ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সাবেক সদস্য, সমকাল থিয়েটারের সদস্য, সাবেক যুব রেড ক্রিসেন্ট রক্ত বিভাগের প্রধান, রোটারি ক্লাব অব গাজীপুর সেন্ট্রালের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর ক্লাব লিমিটেডের সদস্য, গাজীপুর ডায়াবেটিকস এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ নদীব্রাজক কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক নির্বাচিত সদস্য, হাজীপাড়া জামে মসজিদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর সদর মেট্রোথানা জামে মসজিদ কমিটির সদস্য এবং জয়দেবপুর বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টাসহ অসংখ্য সামাজিক কাজে নিযুক্ত রয়েছেন।