বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ক্রসফায়ার

ক্রসফায়ার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ নির্বাচন পরবর্তী দেড় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের বেশির ভাগই সামপ্রতিক সময়ে সহিংসতায় নিহত বা ক্ষয়ক্ষতির মামলার আসামি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২২ জন এবং চলতি মাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার বা আটকের পর মৃত্যুর ঘটনা বলে পরিবারের অভিযোগ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হেফাজতে ও আটকের পর আসামির মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সমালোচনা করে আসছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান জানতে চাইলে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, গ্রেপ্তারের পর ক্রসফায়ারের অভিযোগের পক্ষে কোন তথ্য নেই। ক্রসফায়ারের ঘটনার তদন্ত করা হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনায় মামলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হয়।

গত ২৬শে জানুয়ারি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় যৌথবাহিনীর গুলিতে মারুফ হোসেন (২৪) ও আবুল কালাম (২২) নামে দুই শিবির কর্মী নিহত হন। আবুল কালাম ঊপজেলা শিবিরের সেক্রেটারি। গ্রেপ্তারের একদিন পর তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারা মারা যায় বলে পুলিশ দাবি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। ২৭শে জানুয়ারি একই জেলার তালা উপজেলার মাগুরা খেয়াঘাট এলাকায় ছাত্রদলের উপজেলা সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনিও মারা যাওয়ার একদিন আগে গ্রেপ্তার হন বলে স্বজনরা জানান। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও গাছকাটার অভিযোগে পুলিশের মামলা রয়েছে। ১৯শে জানুয়ারি আবু হানিফ ছোটন (১৬) নামে আরেক শিবির কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। দশম শ্রেণীর ওই ছাত্র সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বড়বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর মধ্যরাতে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার একটি মাঠে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণের মামলা রয়েছে। ১৬ই জানুয়ারি দেবহাটায় যৌথবাহিনীর গুলিতে আনারুল ইসলাম (২৫) নামে আরও এক শিবিরকর্মী নিহত হন। আনারুল ইসলামকে পুলিশ একদিন আগে গ্রেপ্তার করে বলে স্থানীয়রা জানায়। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলাসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন এনামুল হক নামে এক জামায়াত নেতা। তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফেরার পথে উপজেলা গেট থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটকের পর তিনি ছিলেন নিখোঁজ। রংপুরের মিঠাপুকুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন ডাকাত নিহত হয়। নিহত তিনজন হলেন- ময়মনসিংহের রিপন মিয়া (৩৫) ও শরীয়তপুরের আনোয়ার হোসেন (৩৬) আহমেদ আলী (৩৫)। পুলিশ জানায়, ডাকাতি করে পালানোর সময় হাইওয়ে পুলিশ তাদের গাড়ির গতিরোধ করলে তারা গাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এতে তারা নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নীলফামারীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী ও ছাত্রদল নেতা আতিকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। পরে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তারা দুজনই সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি। মামলার তৃতীয় আসামি ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয় ২০শে জানুয়ারি। একই মামলার আরেক আসাাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিবির কর্মী মোহিদুল ইসলাম (২৫) এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবারের দাবি, গত ১৩ই জানুয়ারি রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টাঙ্গাইল থেকে আটক করে তাকে। ২০শে জানুয়ারি মেহেরপুরের শ্মশানঘাট এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে জামায়াতের জেলা সহকারী সেক্রেটারি তারিক মু. সাইফুল ইসলাম (৩৫) এর মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারের একদিন পর তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, তার বিরুদ্ধে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কয়েকটি মামলা রয়েছে। ৩০শে জানুয়ারি সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তোহিদুল ইসলাম তৌহিদ (৩৫) বুধবার রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গত ২৮শে জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। পরিবারের সদস্যরা থানায় তৌহিদের খোঁজ নিলে অস্বীকার করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু গভীর রাতে তৌহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। বাড়ির সদস্যরা ভয়ে দরজা না খোলায় তারা চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই কাছাকাছি এলাকায় ২-৩টি গুলির শব্দ হয়। এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের ভাষ্য, তৌহিদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গভীর রাতে তৌহিদকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশের পাল্টা গুলিতে গুলিবিদ্ধ তৌহিদ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। ৩০শে জানুয়ারি র‌্যাবের গুলিতে গোলাম সরওয়ার নামে এক যুবদল নেতা নিহত হন ফেনীতে। তিনি ফাজিলপুর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি। তবে র‌্যাব-পুলিশের দাবি বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছেন। ওই বিকালেই র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা আটক করার কথা স্বীকার করে।

একই দিন র‌্যাবের ক্রসফায়ারে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২নং নম্বর আসামি বাবলু মোল্লা (২৭) নিহত হন। আগের দিন রাত পৌনে দুইটার দিকে শহরে হোসেনপুরে অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয়েছে। গত সপ্তাহে জাবেদ (২৬) নামে এক যুবক রাজধানীর পল্লবীর সিরামিক রোডে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আহত হন। মধ্যরাতে সাড়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাটে নিহত হন দিদারুল আলম। তাকে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও বেশ কয়েকটি মামলার আসামি বলে দাবি করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম সীতাকুন্ডে নিখোঁজের ৩ দিন পর লাশ উদ্ধার হয় শিবির নেতা মো. মোশারফের। ১৭ই জানুয়ারি র‌্যাব সদস্যরা তুলে নিয়ে তিনদিন পর তাকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছে। ২০শে জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে স্থানীয়রা তার লাশ দেখতে পায়। ১৬ই জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে দুই ছিনতাইকারী নিহত হন। রাজীব ও নাসির নামে ওই দুই ছিনতাইকারীকে পেশাদার খুনি বলে দাবি করেছে পুলিশ। ১৯শে জানুয়ারি গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র গ্রামে যৌথবাহিনীর গুলিতে আহত হয় সোহাগ নামে এক শিবির কর্মী। দুদিন পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সোহাগ ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ১২ই জানুয়ারি ভোরে পলাশবাড়ীতে শহর জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক সাকিব হাসানের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।

চলতি মাসে গত ১৮ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ও লাশ উদ্ধারের সংখ্যা ১১। এর মধ্যে সন্ত্রাসী না হলেও বিভিন্ন মামলার আসামি রয়েছে ২ জন। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলমের (৪৫) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার ১৬ নম্বর আসামি। নিহতের পরিবার জানিয়েছে, ঢাকার জয়দেবপুর এলাকার সৎ মায়ের বাসায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় ১৯শে জানুয়ারি রাতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন জাহাঙ্গীর আলম ও জবান আলীকে আটক করেছিল। ৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে জবান আলীর লাশ পাওয়া গেলেও জাহাঙ্গীর নিখোঁজ ছিল। ১২ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর মারা যান এক শিবির কর্মী। জসিম উদ্দিন নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতার অভিযোগের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। (মানবজমিন)