আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
ভারতের মহারাষ্ট্রে সরকারি চাকরিতে কোটার দাবিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজ্যটির বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রেন চালাচল বিঘ্নিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছে পুলিশ। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে কোটার দাবিতে বিক্ষোভ করছে মারাঠিরা এবং সেই সঙ্গে চলছে সহিংসতা। সোমবার থেকে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলনে আত্মাহুতি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। একজন আন্দোলনকারী সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে ও অপরজন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ভারতের মহারাষ্ট্রে মারাঠিদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা বরাদ্দের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে ‘মহারাষ্ট্র ক্রান্তি মোর্চা’ ও সমমনা সংগঠনগুলো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডিএনএ ইন্ডিয়া লিখেছে, মহারাষ্ট্রের ৩০ শতাংশ মারাঠি। কংগ্রেস ও এনসিএফের জন্য তাদেরকে অনেক বড় ভোট ব্যাংক মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মারাঠিরা শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে নিজেদের জন্য কোটা বরাদ্দের দাবিতে জানিয়ে আসছিল। কিন্তু হাইকোর্টের এক সিদ্ধান্তে তাদের ওই দাবি পূরণে সরকারি আইন প্রণয়নের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস জানিয়েছেন, মারাঠিদের দাবি মতো কোটা বরাদ্দের জন্য সরকার আদালতের কাছে পূর্বের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট তাতে রাজি হয়নি। কিন্তু মারাঠিদের দাবি বিবেচনা করার জন্য গঠিত কমিশন এখনও কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা আছে আমরা তার সবই করছি।’
মারাঠিদের কোনও কোনও নেতা আবার কোটা চান না। তাদের দাবি, মারাঠিদের যেন ‘পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী’ হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কারণ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ৫০ শতাংশের বেশি কোটা দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে মারাঠিদের জন্য কোটা বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে উঠবে। অপরদিকে যদি তাদের ‘পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী হিসেবে যে কোটা বিদ্যমান আছে মারাঠিরা সেখান থেকেই সুবিধা নিতে পারবে।
ভারতীয় অপর একটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রে মারাঠিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। রাজ্যটির ৭৫ শতাংশ জমিই তাদের মালিকানায় রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এ পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে ৯০ শতাংশ। রাজ্যটিতে অবস্থিত ১০৫টি চিনিকলের ৮৬টির মালিক তারা। ৫৫ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাঠিরাই নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া সমবায় সমিতিগুলোর ৭০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। ১৯৬২ সাল থেকে মহারাষ্ট্রে নির্বাচিত মারাঠি এমএলএদের সংখ্যা ৬০ শতাংশের ওপরেই থেকেছে। রাজ্যটির ১৮ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই মারাঠি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন