শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কে হচ্ছে জামায়াতের নয়া আমির?

কে হচ্ছে জামায়াতের নয়া আমির?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীতে নতুন নেতৃত্ব আসছে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়ে দল চালানোর পর শেষ পর্যন্ত সাংগঠনিক অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিগগিরই দলের আমিরসহ গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় পদগুলোয় নতুন মুখ দেখা যাবে।

জামায়াতের আমির নির্বাচন করবেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্যরা। তবে দলের গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী নতুন আমির নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামীর দণ্ডাদেশের শেষটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার বাধ্যবাধকতা ছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর এখন দ্রুতই বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন শুরা সদস্যরা। আর তাতেই নির্বাচন করা হবে জামায়াতের নতুন আমির।

জানা গেছে, জামায়াতের পরবর্তী কেন্দ্রীয় আমির হওয়ার দৌড়ে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে তিন নেতা রয়েছেন। তাঁরা হলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগর সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মকবুল আহমাদ।

একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার আতঙ্কেও ভুগছে। শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে সংগঠনটি নতুন নামে আত্মপ্রকাশের কথা ভাবছে। সে অনুযায়ী আগাম প্রস্তুতিও রয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে সংগঠনটির নেতাদের কেউ এ ব্যাপারে এখনই সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না।

জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, সাত বছর ধরে জামায়াতের ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে কোনো অফিস খোলা রাখতে পারেনি নেতাকর্মীরা। এক সময়ের সুসংগঠিত দলটি চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ে এখন চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থায়। প্রকাশ্য সাংগঠনিক তৎপরতাও নেই। এ অবস্থায় কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালিত হচ্ছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তাঁর স্থলে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছিল জামায়াত। কেন্দ্রীয় আমিরের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হওয়ার পর থেকে দলে দ্রুত পটপরিবর্তন শুরু হয়।

জামায়াতের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আমির দলের প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। কিন্তু আমির না থাকলে দ্রুততম সময়ে নতুন আমির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন আমির নির্বাচনের সুযোগ ছিল না। নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এখন দ্রুতই নতুন আমির নির্বাচিত করতে যাচ্ছে জামায়াত।

জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ধারা-১৫-এর উপধারা ২-এ বলা আছে, সদস্যদের (রোকন) সরাসরি গোপন ভোটে আমিরে জামায়াত তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। আর নতুন আমির নির্বাচিত করবেন নতুন সেক্রেটারি জেনারেল।

বর্তমানে জামায়াতের শীর্ষ দুটি পদ আমির ও সেক্রেটারি চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। নিষিদ্ধ দলের মতো গোপন স্থান থেকে তাঁদের নামে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রতিবাদের বিবৃতি পাঠানো হয়। দলীয় গঠনতন্ত্রের ধারা-১৭-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় আমিরের পদ শূন্য হলে এক মাসের মধ্যে নতুন আমির নির্বাচন করতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুস সামাদ বলেন, ‘নিজামী সাহেবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন আমির নির্বাচিত করা হবে। নতুন আমির দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার পরামর্শক্রমে নতুন সেক্রেটারি নিয়োগ দেবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বরত নেতারা ভারমুক্ত হবেন অথবা তাঁরা সরে যাবেন, তাঁদের স্থলে নতুন নেতৃত্ব আসবে।’

জামায়াতের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা বলছেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যে ভুল করেছেন তাঁর দায় নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা নিতে চায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজা ভোগ বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শেষে নতুনভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে দলকে। সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলে নতুন কৌশলে অগ্রসর হবে দল। সে ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে টিকে থাকবে জামায়াত। আর দলের নেতৃত্বে আসবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্ম। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। একই সঙ্গে ত্যাগ করবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের।

এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, জামায়াতকে নতুন রাজনীতি নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনে দল হিসেবে এখন আর জামায়াতের নিবন্ধন নেই। একাত্তরে যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধীর ভূমিকায় ছিলেন, জামায়াত-শিবিরের তরুণ নেতৃত্ব তাঁদের দায়মুক্ত হতে চান। তাঁরা চান নতুন নামে এক ইসলামী রাজনৈতিক দল, যেখানে অতীতের কোনো দায় থাকবে না। সূত্র- কালেরকন্ঠ