শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > কুড়িগ্রাম সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

কুড়িগ্রাম সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ কুড়িগ্রামে আসন্ন ঈদকে ঘিরে চলছে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ৫টি পরিবহন সংগঠন ও পুলিশের নামে পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতিমাসে উঠছে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব চাঁদাবাজির ফলে বেড়ে গেছে পণ্যবোঝাই ও বিভিন্ন রুটের বাসভাড়া। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। জেলার ৯ উপজেলার ৩৮টি পয়েন্টে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব। শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর থেকে পুলিশ প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটালেও দেখার কেউ নেই। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ, ৩টি পৌরসভা ও ৫টি মোটর মালিক ও শ্রমিক সংগঠন টোল আদায়ের নামে প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার চাঁদা তুলছে। এর মধ্যে সংগঠনগুলো তুলছে ২ লাখ টাকা এবং পুলিশ ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল, ঢাকা, চিটাগাং এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫ হাজার যানবাহন থেকে প্রকারভেদ অনুযায়ী চাঁদা তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিমাসে মিনিবাস থেকে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, মাইক্রোবাস থেকে ৩শ’ টাকা, পিকআপ-ভ্যান ১শ’ টাকা, দূরপাল্লার কোচ ১ হাজার টাকা, ট্রাকপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, ট্রাকটর দেড়শ’ টাকা, ট্রলি ১শ’ টাকা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল থেকে ১শ’ টাকা হারে শুধুমাত্র পুলিশ চাঁদা আদায় করছে। এছাড়া ৫টি শ্রমিক সংগঠন ও পৌর টোলের নামে প্রতিদিন প্রতি পয়েন্টে আদায় করছে ৫ থেকে ৫০ টাকা। এভাবে জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনকে গুনতে হয় নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা।
জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বকসী জানান, জেলায় মিনিবাস ২ শতাধিক, দূরপাল্লার কোচ দেড়শ’টি, ট্রাক ৩১০টি, মাইক্রোবাস ৩২০টি, পিকআপ ভ্যান ২৫০টি, অটো বাইক ২ হাজারটি ৫শ’টি, মহেন্দ্র ১২০টি, ট্রাক্টর ১৭০টি, ট্রলি ৪শ’টি এবং ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ২৬০টি রয়েছে। এছাড়াও জেলার বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট সোসাইটি সঞ্চয় রসিদ মূলে প্রতিদিন ১০ টাকা করে তুলছে। উলিপুর পৌরসভা ১০ টাকা, নাগেশ্বরী পৌরসভা ১০ টাকা ও কুড়িগ্রাম পৌরসভা যানবাহন প্রতি ৫ টাকা টোল আদায় করছে। মালবাহী যানবাহনের ওপর তুলছে ৫০ টাকা হারে। উলিপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৩১৪ নামের একটি সংগঠন গাড়িপ্রতি ২০ টাকা করে সাদা পৃষ্ঠায় সিল দিয়ে টোল আদায় করছে। দুস্থ ও অসহায় শ্রমিকদের সাহায্যের নামে উলিপুর উপজেলা ট্যাক্সি, অটোরিকশা, অটোটেম্পো, মিশুক, বেবিট্যাক্সি, সিএনজি, ট্যাক্সিকার শ্রমিক ইউনিয়ন নামে আদায় করছে ১০ টাকা করে। শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্টের নামে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন নামে বাস ছাড়াও অন্যান্য যানবাহন থেকে ১০ টাকা করে টোল আদায় করছে। জেলার ৩৮টি পয়েন্টে নামে-বেনামে টোল আদায় করা হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হলো কুড়িগ্রাম সদরের শাপলা চত্বর, খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ গেট, জজকোর্ট মোড়, রেলগেট, ধরলা ব্রিজ, বীরপ্রতীক তারামন বিবি সড়ক মোড়, যাত্রাপুর, পাটেশ্বরী ও কাঁঠালবাড়ী বাজার এলাকা; রাজারহাট উপজেলার চওড়া বাজার, সেলিমনগর, রেলগেট, নাজিমখাঁ, চাঁদনী কর্নার, কলেজ মোড়, আদর্শ বাজার, সিংগের ডাবরী, বৈদ্যের বাজার ও রেলস্টেশন; উলিপুর উপজেলার থানা মোড় ও নতুন বাস টার্মিনাল; ফুলবাড়ি উপজেলার কাঁচারী মাঠ, উপজেলা গেট ও পোদ্দার মার্কেট মোড়; নাগেশ্বরী উপজেলার ঈদগাহ মাঠ মোড়, হাসপাতাল রোড, কলেজ গেট ও পাম্পের মোড়; ভূরুঙ্গামারী উপজেলার-বাসস্ট্যান্ড মোড়, বাবুরহাট ও কচাকাটা; রৌমারী উপজেলার উপজেলা গেট, কর্ত্তিমারী, সায়দাবাদ, দাঁতভাঙ্গা ও শৌলমারী বাজার। এছাড়াও রাজিবপুর উপজেলার বটতলা নামক এলাকায় এবং চিলমারী উপজেলার পাম্পের মোড় পয়েন্টে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের লোক দিয়ে এসব টাকা আদায় করছে। আবেদ ও রঞ্জু নামে দুই আদায়কারী জানান, প্রতিদিন আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকার মজুর হিসেবে যানবাহনগুলো থেকে তারা টোল আদায়ের কাজ করে। তারা নিজেরাও জানে না এসব টাকা তুলে কি কাজে লাগানো হবে।
কুড়িগ্রাম মোটর মালিক গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিতে হয়। যাতে গাড়ির ফিটনেস, চালকের কাগজপত্র ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়ে সমস্যা তৈরি না করে। আর বিভিন্ন সংগঠন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। ট্রাফিক বিভাগের এস আই সাগর চাঁদাবাজির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট আতাউর রহমান ছুটিতে আছেন। তার সঙ্গে কথা বলেন। এ ব্যাপারে ট্রাফিক সার্জেন্ট আতাউর রহমান দাবি করেন, তার যোগদানের পর থেকে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে কেউ ব্যক্তিগতভাবে কিছু করলে তার দায়-দায়িত্ব তাকে বহন করতে হবে।
এসব বিষয়ে পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার কু-ু জেলায় দৃশ্যমান চাঁদাবাজির ঘটনা জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান, চাঁদাবাজি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি যারা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।