রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > কুইক রেন্টালে একবছরে অপচয় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি!

কুইক রেন্টালে একবছরে অপচয় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বেসরকারি খাতে পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় মাত্র ২ টাকা। অথচ গ্যাসচালিত দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) কেন্দ্রগুলোয় ব্যয় হচ্ছে ৬ টাকার বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত অর্থবছরে গ্যাসভিত্তিক কুইক রেন্টাল থেকে সরকার বিদ্যুৎ কেনে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ইউনিট। এজন্য পিডিবির ব্যয় হয় ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি কেন্দ্র থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৫৫০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে অপচয় ১ হাজার ১২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

আবার গত অর্থবছর জ্বালানি মূল্যের ছয় গুণের বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে গ্যাসভিত্তিক কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত গ্যাসের বিল পরিশোধ করা হয় প্রায় ২২২ কোটি টাকা। একই সময়ে পাঁচটি কেন্দ্রকে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের ব্যয় মূল্যায়ন করে দেখা যায়, ফার্নেস ও ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উত্পাদনে গড়ে ব্যয় ১৬ থেকে ২৪ টাকা। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ব্যয় হয়েছে ৬ টাকার ওপরে। জ্বালানি সংমিশ্রণের ফলে কুইক রেন্টালের গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা। তার পরও প্রতি ইউনিটে পিডিবিকে গড়ে লোকসান দিতে হয়েছে ৮ টাকা ২৬ পয়সা।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্যাসভিত্তিক ১০০ মেগাওয়াট মতার একটি কেন্দ্র নির্মাণে সর্বোচ্চ ৮০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। সরকার চাইলেই এ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারত। বিকল্প হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) কেন্দ্র নির্মাণ করলেও বিশাল লোকসানের হাত থেকে রা পেত সরকার। এসবের পরিবর্তে কুইক রেন্টাল করায় প্রতি বছর কয়েকশ কোটি টাকা লোকসান গুনছে পিডিবি।

গ্যাসভিত্তিক পাঁচটি কুইক রেন্টালের তিনটি নির্মাণ করেছে বিদেশী প্রতিষ্ঠান এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস। এগ্রিকো ছাড়া বাকি দুটির মালিক ম্যাক্স পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার। পাঁচটি কেন্দ্র থেকে গত বছর পিডিবি বিদ্যুৎ কিনেছে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ ইউনিট। এতে মোট লোকসান হয়েছে ৪২৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যদিও কুইক রেন্টাল ছাড়া গ্যাসভিত্তিক বাকি সব কেন্দ্রে মুনাফা করছে পিডিবি।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) তমাল চক্রবর্তী বলেন, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে উত্পাদন ব্যয় কম হয়ে থাকে। কিন্তু গ্যাসস্বল্পতায় অনেক সময় কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ রেখে সরকারি কেন্দ্রগুলোয় উত্পাদন করা হয়। বন্ধ রাখা হলেও চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হয় পিডিবিকে। তাই গড় উত্পাদন ব্যয় বেড়ে যায়।

জানা যায়, এগ্রিকোর ঘোড়াশালে ১৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে পিডিবি গত বছর বিদ্যুৎ কিনেছে ৮৮ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এতে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় ৭৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আর ভাড়া হিসেবে কেন্দ্রটিকে পরিশোধ করা হয় ১৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৭০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ৫০ কোটি ৮৮ লাখ ইউনিট। এ কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হলেও ভাড়া হিসেবে ব্যয় ২৪৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একই কোম্পানির অরেক কেন্দ্র আশুগঞ্জ ৮০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ইউনিট। এখানেও জ্বালানি ব্যয় ৩৯ কোটি ৩৮ লাখ আর ভাড়া ২৭৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

ম্যাক্স পাওয়ারের ৭৮ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ কিনেছে ৫২ কোটি ২৯ লাখ ইউনিট। এ বিদ্যুতের বিপরীতে জ্বালানি ব্যয় ৪৪ কোটি ২২ লাখ আর ভাড়া ২৭০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এছাড়া ইউনাইটেডের আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদন হয়েছে ৩২ কোটি ২২ লাখ ইউনিট। এর বিপরীতে জ্বালানি ব্যয় ২৮ কোটি ১১ লাখ আর ভাড়া ১৬৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কুইক রেন্টালগুলো সর্বোচ্চ মাত্রায় উত্পাদনে থাকলেও ৪ টাকার বেশি ব্যয় হতো। উত্পাদন বন্ধ রাখায় ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। তাই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি।