শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > খেলা > কী হলো মুস্তাফিজের!

কী হলো মুস্তাফিজের!

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
সুন্দরবনের কোলঘেঁষা সাতক্ষীরার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্ম মুস্তাফিজুর রহমানের। পূর্বপুরুষের কেউ সুন্দরবনের চতুর শিকারী ছিলেন কিনা, কে জানে! তবে শিকারী যেমন শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি মুস্তাফিজও বল হাতে ব্যাটসম্যানকে বিপদে ফেলতে সিদ্ধহস্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবেই হৈচৈ ফেলে দিয়ে, আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার তো এমনি এমনি তিনি পাননি!

সেই মুস্তাফিজ ইদানীং কেমন যেন বিবর্ণ। গত বছর ইংলিশ কাউন্টির দল সাসেক্সে খেলতে গিয়ে ইনজুরি বাঁধিয়েই কি সর্বনাশটা হলো? ওই ইনজুরির পর থেকেই চেনা ছন্দে দেখা যাচ্ছে না ‘দ্য ফিজ’কে।

২০১৫ সালে স্বপ্নের মতো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু মুস্তাফিজের। ইনজুরির সঙ্গে লড়াইয়ের শুরুও ওই বছরের শেষদিক থেকে। কাঁধের ইনজুরির কারণে ২০১৫ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি। একই ইনজুরি পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) খেলতে দেয়নি কাটার মাস্টারকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপের ফাইনাল সহ শেষ দুই ম্যাচ এবং মার্চ-এপ্রিলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচও মিস করেন এই পেস-তারকা।

গত মৌসুমে আইপিএলে কাঁধে ব্যথা নিয়ে বল করেই সাফল্য পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। ব্যথা নিয়েই খেলতে যান ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেই পুরোনো ব্যথাই সাসেক্সের হয়ে অনুশীলনের সময় আবার ফিরে আসে।

ইংল্যান্ডে দুটি ম্যাচ খেলে আবার ইনজুরিতে পড়েন মুস্তাফিজ। গত বছরের ১১ আগস্ট লন্ডনের বুপা ক্রমওয়েল হাসপাতালে শল্যবিদ অ্যান্ড্রু ওয়ালেস অস্ত্রোপচার করেন তার কাঁধে। এরপর প্রায় আড়াই মাস পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন তিনি।

কিন্তু সেই পুরোনো মুস্তাফিজকে যেন খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না। কারণটা কি কাঁধের ইনজুরি? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর তেমনই অভিমত। তিনি বললেন, ‘একটা কারণ তো অবশ্যই ইনজুরি। ইনজুরি থেকে ফেরত আসার পর আগের রিদম খুঁজে পাচ্ছে না মুস্তাফিজ। হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে তার।’

পেসার সংকটের সময়ে মুস্তাফিজুর রহমানের আবির্ভাব আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল বাংলাদেশ দলে। গত বছরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন। ওই ম্যাচে ২০ রানে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে ভালো অবদান রেখেছিলেন। তবে মুস্তাফিজকে ক্রিকেট বিশ্ব ভালোভাবে চিনেছিল ভারতের বিপক্ষে সিরিজে। প্রথম ম্যাচে ৫ আর পরের ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কাটার মাস্টারের তোপে বিশ্বের বড়-বড় ব্যাটসম্যান ঘায়েল হয়েছে। কিন্তু ইদানীং যেন তার কাটারে আগের সেই ধার নেই। কেমন যেন এক অচেনা মুস্তাফিজ!

এবারের আইপিএলে হায়দরাবাদের জার্সিতে উপেক্ষিত মুস্তাফিজমুস্তাফিজের বোলিংয়ের ধার কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গাজী আশরাফ লিপু বলেছেন, ‘সুবিধামতো গতি নিয়ন্ত্রণ ও ভীতিকর ইয়র্কার করার দক্ষতা ছিল মুস্তাফিজের। তবে এই মুহূর্তে এই জিনিসগুলোর কম্বিনেশন হচ্ছে না। তার কাটারটা ছিল সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কিন্তু এখন সেটা ঠিকমতো হচ্ছে না। এর জন্য একটু স্লো উইকেট দরকার। কিন্তু সম্প্রতি সে এ ধরনের উইকেটে খেলতে পারেনি।’

চলতি বছরে মুস্তাফিজ খেলেছেন পাঁচটি ওয়ানডে, চারটি টি-টোয়েন্টি এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ। এই ১১ ম্যাচে তার শিকার ২৩টি উইকেট। নিঃসন্দেহে ভালো পারফরম্যান্স। কিন্তু শুরুর দিকে তিনি যেমন ভীতিজাগানিয়া বোলার ছিলেন, এখন আর যেন তেমন নন। এ প্রসঙ্গে লিপুর ব্যাখ্যা, ‘মুস্তাফিজ শুরুতে অসাধারণ বোলিং করেছিল, কিন্তু সেই ধারা এখন অব্যাহত নেই। শুরুতে ভালো করলে খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিক ভালো খেলার একটা চাপ থাকে। কেউ অতিরিক্ত উচ্চতায় পৌঁছে গেলে তার জন্য ভালো করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। গত কিছু দিন ধরে মুস্তাফিজকে কোনও ব্যাটসম্যানের জন্যই থ্রেট বলে মনে হয়নি। রানের চাকা আটকে রাখার পাশাপাশি তার উইকেট নেওয়ার ক্ষমতাও কমে গেছে বলে মনে হয়। সবকিছু মিলে আমি বলবো, উইকেটের প্রভাব এবং ইনজুরি তাকে তার বৃত্ত থেকে সরিয়ে দিয়েছে।’

গত আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলে আলোড়ন তুলেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রত্যেকটি ম্যাচে কাটার মাস্টারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ধারাভাষ্যকাররা। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভর করে হায়দরাবাদ প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছিল। অথচ সেই মুস্তাফিজ চলতি আসরে উপেক্ষিত। মাত্র একটা ম্যাচেই এ পর্যন্ত খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ওই ম্যাচে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ‘দ্য ফিজ’কে। ২.৪ ওভারে ৩৪ রান খরচ করে দলের হারের সাক্ষী হতে হয়েছে।

বাংলাদেশের অভিষেক ওয়ানডের অধিনায়ক লিপুর মতে, আইপিএলে মুস্তাফিজের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের অন্যতম কারণ উইকেট, ‘টানা দুই ম্যাচ জেতার পর মুস্তাফিজকে খেলিয়েছে হায়দরাবাদ। আমার মনে হয়, মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স এবং উইকেটের কথা চিন্তা করেই আপাতত তাকে খেলাচ্ছে না হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্ট। কয়েকদিন পর উইকেট স্লো হলে হয়তো তাকে একাদশে দেখা যাবে।’

মুস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ করে লিপুর বক্তব্য, ‘শ্রীলঙ্কা সফরে মুস্তাফিজ সবগুলো ম্যাচ খেললেও সেখানে তাকে আগের ভূমিকায় দেখা যায়নি। হয়তো নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় ভালো ব্যাটিং উইকেট ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, মুস্তাফিজ আগে ডানহাতি-বাঁহাতি দুই ধরনের ব্যাটসম্যানের জন্যই কার্যকর ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ওপরে সে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।’

কারণ যা-ই হোক, মুস্তাফিজের স্বমূর্তিতে ফেরা খুবই জরুরি। তার নিজের জন্য, আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও।

বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেয়া