বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রায় ১২১ কোটি টাকার অডিট আপত্তি উঠে এসেছে। ২০০৮-১২ অর্থবছরের হিসাবের ওপর মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই ঘাপলার কথা উল্লেখ করা হয়। সংসদীয় কমিটি সবগুলো অডিট আপত্তি দূর করার সুপারিশ করেছে।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৮৯তম বৈঠকে এই অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী, মো. আফছারুল আমীন, গোলাম দস্তগীর গাজী ও বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন।
বৈঠকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ২০০৮-১২ অর্থবছরের হিসেবের ওপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ২০১২ -২০১৩ এ অন্তর্ভুক্ত আপত্তির অনুচ্ছেদ ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯ ও ১০ এই ১০টি অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানান, এসব অডিট আপত্তি দ্রুত নিস্পত্তির জন্য সুপারিশ করেছে কমিটি। কোনোটি সাত দিন, কোনোটি ১৫ দিন আবার কোনোটি নিষ্পত্তির জন্য তিন মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির পাস বইয়ের অনুকূলে অনিয়মিতভাবে প্রাধিকারের অতিরিক্ত পণ্য ইস্যু করায় শুল্ককরাদিবাবদ ৭ কোটি ৯০ লাখ ১৩ হাজার ৮১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটে আপত্তি তোলা হয় জানানো হয়েছে বৈঠকে। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলার তদারকি জোরদারপূর্বক আগামী তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৈঠকে বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত কাঁচামাল ডেডোর উপকরণ উৎপাদন অপেক্ষা অতিরিক্তি ব্যবহার দেখানোর ফলে শুল্ক কারাদিবাবদ ৪ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটের আপত্তি। এটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।
অডিটের আর আপত্তি হলো, বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন পণ্য বিভিন্ন ডিপ্লোম্যাটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক বন্ডের আওতায় আমদানি করায় শুল্ক করাদিবাবদ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৩ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এটিও তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।
এ ছাড়া বিভিন্ন ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করায় অতিরিক্ত আমদানি পণ্যের শুল্ক করাদিবাবদ ৪০ কোটি ২২ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৬ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে অডিটে আপত্তি করা হয়। কমিটি এটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে উল্লেখ্য করা হয়, দেশে ব্যবহারযোগ্য দ্রব্যাদি বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত পণ্য বন্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও খালাস পণ্যের ধার্য্য শুল্ক করাদির ওপর অনিয়মিত সুদ কম আদায় করায় ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটের আপত্তি। কমিটির পক্ষ থেকে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
বন্ডের আওতায় আমদানি কাঁচামাল বন্ড রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি না করায় ওই কাঁচামাল এক্সবন্ডের মাধ্যমে খালাস না করায় শুল্ক করাদিবাবদ এক কোটি ৩৪ লাখ ৮ হাজার ৮৯২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটের আপত্তি। অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্ধিত বন্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য অনিয়মিত স্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের মাধ্যমে খালাসের অনুমোদন করায় শুল্ক করাদিবাবদ ৯৬ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৪ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটে আপত্তি তোলা হয়। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে।
বন্ডের আওতায় আমদানি কাঁচামাল বন্ড রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি না করে অনিয়মিত বিক্রয় করায় শুল্ক করাদিবাবদ ১২ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৪১ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে জানানো হয়। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
বন্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও বন্ডের আওতায় আমদানি পণ্য খালাস না করায় শুল্ক করাদিবাবদ ১৭ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৯৯৩ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে জানানো হয়। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে।
শুল্ক করাদিবাবদ ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ৩৬০ টাকা অনাদায় সম্পর্কিত নথিপত্র অডিটে উপস্থাপন না করা। কমিটির পক্ষ থেকে এজিবির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগপূর্বক অনধিক ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি অথবা আপিলের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগপূর্বক আপিল করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে সিঅ্যান্ডএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অডিট অফিস ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র:জাগোনিউজ২৪.কম,