শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > কালোবাজারির দখলে টিকেটের সিরিয়াল

কালোবাজারির দখলে টিকেটের সিরিয়াল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: টিকেট কিনতে মধ্য রাত কিংবা ভোরেই লাইনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা। ‘যাত্রী বেশী’ এসব কালোবাজারি লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটে চড়া দামে তা বিক্রি করছেন যাত্রীর কাছে। দেখে বুঝার উপায় নেই যে তারা কালোবাজারি।

শনিবার কাউন্টার খোলার আধ ঘণ্টার মধ্যেই তারা কেটে নিয়েছেন ৪০ টিকেট। পরে এসব টিকেট বিক্রি হয়েছে প্রায় তিনগুণ দামে।

পেশাগত পরিচয় গোপন রেখে শনিবার বিকেলে ২ অক্টোবরের টিকেট কিনতে চাইলে একজন কালোবাজারি ঢাকা-চট্টগ্রামের ৭৩১ টাকা মূল্যের এসি টিকেটের দাম বললেন-‘একদাম আড়াই হাজার টাকা।’

কমলাপুর স্টেশনে আলাপ-চারিতার এক পর্যায়ে এ কালোবাজারি জানালেন, তার নাম মোখলেস। স্টেশনে ভ্রাম্যমান পান সিগারেট বিক্রি করেন। ঈদের আগে এ ‘মৌসুমি’ ব্যবসা করেন বলে তিনি জানান।

মোবাইল নম্বর চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে মোখলেস বলেন, ‘ফোনে এসব বিষয়ে আলাপ হয় না। স্টেশনে এলে আমার মতো অনেক মোখলেসের দেখা মিলবে।’
‘কীভাবে দেখা মিলবে?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘টিকিট না পেয়ে বা টিকেটের জন্য যারা স্টেশনে ঘুরঘুর করে তাদের আমরা খুঁজে বের করতে পারি।’

কমলাপুর স্টেশনের একপ্রান্তে কথিত এ মোখলেসের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আরেকজন কালোবাজারি তার কাছে এসে জানতে চান—‘তোর কাছে কয়টা আছে?’
মোখলেস হাত দিয়ে দেখান ২টা আছে। ২টা বিক্রি হয়েছে।

মোখলেসকে ওই লোকটি বলেন-‘আমার চারটিই বেচা শেষ। ভালো কাস্টমার আছে তোর দুইটা বেইচা দিতাছিৃ’ এ কথা বলে মোখলেসকে অপর কালোবাজারি একজন ক্রেতার কাছে নিয়ে যান।

স্টেশনের কয়েকগজ সামনেই বিক্রি হয় ওই দুটি টিকেট।

টিকেট বিক্রি শেষে আবার স্টেশনে দেখা হতেই মোখলেস এ প্রতিবেদকে বললেন, ‘আপনার টিকেট লাগলে বলেন, আমরা টিকেট দিতে পারবো। দাম ওটাই (প্রতি এসি টিকেট আড়াই হাজার টাকা)।’

বিকেলে মোখলেসের সঙ্গে থাকা আরও দু’জনের সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, তারা দশজন শনিবার ২ অক্টোবরের টিকেট কিনেছেন কাউন্টার থেকে। প্রত্যেকে ৪টি করে মোট চল্লিশটি টিকেট কিনেছেন। এভাবেই তারা টিকেট কিনে থাকেন।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার খায়রুল বশীর বাংলানিউজকে বলেন, কালোবাজারি লাইনে দাঁড়ালে দেখে বুঝার উপায় নেই কে কালোবাজারি আর কে যাত্রী। কাউন্টারে সিরিয়ালের ভিত্তিতে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। কারো কাছে বেশি টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।

স্টেশনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কাউন্টারের সামনে সিরিয়াল ধরে কেউ টিকেট কাটলে কাউকে তো কালোবাজারি বলে পাকড়াও করা যায় না। তবে কেউ যদি টিকেট বেশি দামে বিক্রি করেন এবং তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বা রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালোবাজারে টিকেট বিক্রির সঙ্গে জড়িত আরেকজন জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগেও স্টেশনের ভেতর থেকেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে পঞ্চাশ-ষাটটি টিকেট কেনা যেতো।

এখন নিয়ম-কানুন খুব কড়া হওয়ায় কালোবাজারিরা সংঘবদ্ধভাবে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটেন। তবে এখনও ভেতর থেকেও কিছু টিকেট রাতে ‘সিস্টেমে’ কাটা যায় বলে দাবি করেন তিনি।

খায়রুল বশীর বলেন, কালোবাজারিরা কাউন্টারের প্রথমে থেকে টিকেট নিয়ে নেওয়ায় পরে সংকট হয়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,‘দশজন যদি কাউন্টারের সামনে দাঁড়ান তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তারা চল্লিশ টিকেট নিয়ে নেন। এছাড়া কোটা অনুযায়ী টিকেট তো যায়ই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালোবাজারিদের কাছে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট পাওয়া যায়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসে টিকেট বিক্রির দরও তত বাড়তে থাকে।

তবে একজন কালোবাজারি তার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, অতীতের তুলনায় বর্তমানে কালোবাজারে টিকেট বিক্রির প্রবণতা কমে গেছে। বছর তিনেক আগের তুলনায় কালোবাজারির সংখ্যা হাতে গোনার পর্যায়ে চলে এসেছে।

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, আগে ট্রেনের টিকেট সারা বছর কালোবাজারে বিক্রি হতো। বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি হওয়ায় এর প্রবণতা প্রধানত দুই ঈদে।

কালোবাজারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে যাদের মূল উপার্জন ছিলো কালোবাজারে টিকেট বিক্রি। এখন সে অবস্থা আর নেই। এখন অন্য উপার্জনের পাশাপাশি কেবল দুই ঈদে কালোবাজারে টিকেট বিক্রি করেন কমলাপুর স্টেশনে কালোবাজারিরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তাফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে কালোবাজারি নেই বললেই চলে। স্টেশনে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আছেন। এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামরায় নিবিড়ভাবে পর্য্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ঈদের অগ্রিম টিকেট কাটতে আসা কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, ট্রেনের টিকেট প্রায় অর্ধেক চলে যায় ভিআইপি কোটায়। এরমধ্যে কালোবাজারিরা সিরিয়ালে দাঁড়ানোর কারণে প্রকৃত যাত্রীরা টিকেট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ট্রেনের টিকেট প্রতিজন চারটি করে নেওয়ার সুযোগ থাকায় কালোবাজারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাত থেকে কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন এবং প্রত্যেকে চারটি করে টিকেট নিয়ে নেন। এসব কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায় টিকেট। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম