শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > কারাগারের চেয়েও ভয়াবহ গাজীপুর সেফ হোম

কারাগারের চেয়েও ভয়াবহ গাজীপুর সেফ হোম

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
গাজীপুরের মোগরখাল এলাকায় নারী ও কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনকেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৭ কিশোরীর পাঁচজনকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পলাতকদের মধ্যে সর্বশেষ দুইজনের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। বাকিদেরও খোঁজা হচ্ছে।

এদিকে আবাসন সমস্যা, বিনোদনের অভাব ও বাজেট ঘাটতির কারণে সেফহোমের কিশোরীরা পালায় বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে তদন্ত কমিটি। এ জন্য কয়েক দফা সুপারিশও করেছে তদন্ত দল। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।

জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত গাজীপুরের মোগরখালের ওই নিবাসে থাকে ৩৪ জন। তাদের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে একটি রুমের জানালার গ্রিল কেটে ১৭ কিশোরী পালিয়ে যায়। ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে ৮ জন এবং বাকিদের গাজীপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে দুই দিন পার হলেও অন্য পাঁচ কিশোরীকে উদ্ধার করা যায়নি। জেলা প্রশাসন থেকে দাবি করা হয়, পলাতকদের মধ্যে ইতোমধ্যে দুইজনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি পলাতকদের মধ্যে দুইজন বাকপ্রতিবন্ধী। সবাইকেই দ্রুত সময়ে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।

পালিয়ে যাওয়া নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের পর বছর তারা চার দেয়ালে বন্দি। এখানে ফ্যান নেই, আবাসন নিয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। তাই অন্য মেয়েদের পরামর্শে তারা পালিয়ে যায়। পরে একটি হোটেলে ওঠে তারা। হোটেল থেকে পুলিশ ফের তাদের আটক করে সেফ হোমে নিয়ে আসে। তবে ওই নিবাসীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। তাদের উপস্থিতিতেই কয়েক নিবাসী জানায়, এখানে কেউ তিন বছর, কেউ চার বছর ধরে আছে। নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে জানায়, মামলা না থাকলেও বাইরের জগৎ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। তাই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েক নিবাসীর পরামর্শে জানালার গ্রিল ভেঙে পালায় তারা।

নিবাসীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোনো গাফলতি নেই বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক ফরিদা খানম। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ এখানকার বাসিন্দাদের ব্যাপারে সচেতন। তবে ১৭ জন কীভাবে পালাল, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। নিরাপত্তায় এখানে কোনো ঘাটতি ছিল না। পর্যাপ্ত পুলিশ প্রটেকশনও ছিল। তারা হাইলি প্রটেক্টেড।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া মহিলা অধিদপ্তর থেকেও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে আবাসন সমস্যা, চিত্তবিনোদনের অভাব, বাজেট ঘাটতিসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে তদন্ত দল। এগুলো সমাধানে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।

নারী ও কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনকেন্দ্র থেকে নিবাসী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। তাই কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তা জোরদারসহ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়কমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও। আমাদেরসময়