শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কামারুজ্জামান ‘ক্ষমা’ চাইবেন না!

কামারুজ্জামান ‘ক্ষমা’ চাইবেন না!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন না। দলগত, আইনগত ও পারিবারিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত নেতারা কেউ যেন ক্ষমা না চান সে ব্যাপারে জামায়াতের সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।
জামায়াত মনে করে, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার অর্থ দণ্ডিত নেতাদের আদালতের রায় মেনে নেওয়া। এতে মুক্তিযুদ্ধকালেজামায়াতের নৃশংসতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যাওয়া। যার কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হবে দলের পরবর্তী প্রজন্মকে।
জানতে চাইলে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর আমরা রিভিউ আবেদন করব। রিভিউ নিষ্পত্তির পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বাবা সিদ্ধান্ত নেবেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দলগতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবারেরও। নেতা-কর্মীরা বলেন, কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করা হচ্ছে না। রিভিউ আবেদনের সুযোগ দিচ্ছে না। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইব কীভাবে! প্রাণভিক্ষা চাইতে হলে আদালতের রায়কে সঠিক বলে অপরাধ স্বীকার করে নিতে হবে।
তারা বলেন, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সামনে এনে সরকার মুলা ঝুলিয়েছে। ক্ষমা চাইলে সারা দেশে ফলাও করে প্রচার করা হবে অপরাধ স্বীকারের কথা। আবার তখন রাষ্ট্রপতি যেন ক্ষমা না করেন সে জন্য বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনের নামে রাজপথে বসে থাকবে। এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলা চলবে। তাই কামারুজ্জামানের ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
তারা বলেন, সরকার যদি জামায়াতের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করত তাহলে ক্ষমার আবেদন করার একটা রাস্তা থাকত। কামারুজ্জামান ক্ষমা চাইবেন কি-না তা শুধু তার একক সিদ্ধান্তের ব্যাপারই নয়, এ বিষয়ে দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার পর তার আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির সাংবাদিকদের বলেন, আপিলের রায়ের কপি হাতে পেলে আগে রিভিউ করার আবেদন করা হবে। রিভিউ খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করা হবে কি-না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মনে হয় কামারুজ্জামান তা করবেন না।
কামারুজ্জামানের পরিবারের মন্তব্য : শেরপুরের সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে কামারুজ্জামানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
সোমবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই ও শ্যালক। সংবাদ সম্মেলনে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে বাবার দূরতম সম্পর্ক নেই। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
তিনি বলেন, আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা কখনো সোহাগপুরে যাননি। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা ফরমাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো অভিযোগ নেই।
এই দম্ভোক্তি দুঃখজনক : জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ছেলের বক্তব্যকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত সম্পর্কে একজন যুদ্ধাপরাধীর ছেলের দম্ভোক্তি এবং শালীনতাবোধবর্জিত বক্তব্য দুঃখজনক। কামারুজ্জামানের ছেলে সুপ্রিমকোর্টের রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করে অবশ্যই আদালত অবমাননা করেছেন।
এ বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সব পাগলের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা ঠিক নয়। সোমবার সুপ্রিমকোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামানের ছেলে যে কথাগুলো বলেছেন, এসব বক্তব্য তার আইনজীবীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এসব বক্তব্য বিবেচনা করেই আদালত তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি আদালতের কাছে রায়ের একটি শর্ট জাজমেন্ট চেয়েছিলাম। আদালত সেটি দেননি। সম্ভবত আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় দেবেন। যেহেতু শর্ট জাজমেন্ট আদালত পাঠাননি, সেহেতু আমরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছি।
-বাংলাদেশ প্রতিদিন