রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কাপাসিয়া শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ॥ হুমকির মুখে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল

কাপাসিয়া শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ॥ হুমকির মুখে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় বালু ব্যবসায়ীরা নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এতে কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী বিস্তৃর্ণ অঞ্চল হুমকির মুখে। এ অঞ্চলে পাড় ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে ফসলের জমি, হাটবাজার, বসতবাড়ি। তাছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কের ফকির মজনু শাহ সেতু। এভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মারাত্বক সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কোন উদ্যোগই কাজে আসছে না। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গাজীপুর জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কামরুজ্জামান জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর ৫টি মৌজার মধ্যে ইসলামপুর (৭ দশমিক ১৪ একর) টোকনগর (৩৪ দশমিক ৪০ একর) উলুসারা দুটি মৌজা (৬৮ দশমিক ১২ একর) ও সিংহশ্রী (১১৪ একর) মৌজা চলতি বাংলা সনের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারার শর্ত অনুয়ায়ী নদীর অনুমোদিত নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ১ঃ৩ ঢাল সংরক্ষণ করে বলগ্রেড দিয়ে বালু উত্তোলন করার কথা। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় বালু ব্যবসায়ীরা ইজারার শর্ত না মেনে ইজারাকৃত মৌজার বাইরের অ-ইজারাকৃত এবং অননুমোদিত মৌজা/দাগ থেকে সরাসরি ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ও অবৈধভাবে অবাধে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ফলে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ঢাল সংরক্ষণ না করে বালি উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে নদীর পাড় ভেঙ্গে পড়ছে। প্রায় ৬-৭ বছর আগে দস্যু নারায়ানপুর বাজারের পাশে একটি রাস্তাসহ সাড়ে ৩ হাজার বর্গফুট জমি দেবে যায়। অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে ঢাকা-কাপাসিয়া-টোক-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কাপাসিয়া সদরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজুন শাহ সেতু এখন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সেতুর উভয় পাশে ৪শ’ মিটারের মধ্যে সর্ব প্রকার ড্রেজিং নিষিদ্ধ। মাটি দেবে যাওয়ার কারণে এবং সেতুর নিরাপত্তার কথা ভেবে জেলা প্রশাসন সেতুর দু’পাশে নদীর কোন মৌজায় বালু মহাল ইজারা দেয়নি। জেলা প্রশাসন আশপাশের এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকাগুলো বাদ দিয়ে শীতলক্ষ্যার নদীর সীমিত কয়েকটি এলাকার বালু মহাল ইজারা দেয়। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা সীমিত এলাকা ইজারা নিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শীতলক্ষ্যায় আগ্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাপাসিয়ার দক্ষিণে ধান্দিয়া থেকে উত্তরে কুড়িয়াদি পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় অননুমোদিত এলাকা থেকে বালু লুটের উৎসব চলছে। বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে নির্বিঘেœ বালু উত্তোলন করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সরকারী দলের লোকজন ড্রেজার দিয়ে অবাধে, অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের কারণে তরগাঁও ইউনিয়নের বাঘিয়া এলাকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙ্গে আশপাশের গ্রামের নিরীহ মানুষের জমি ধসে পড়েছে, নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের জমি। এলাকাবাসী আগামী বর্ষা মৌসুমেও নদীর তীর এলাকার ভয়াবহ ভাঙ্গনের আশঙ্কা করেছেন। নদীর পাড় ভাঙ্গনের আশঙ্কায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী বিভিন্ন সময় কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারা কোন প্রতিকার পাননি। প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় বরাবরই পার পেয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ইতোপূর্বে ড্রেজার ও ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। কেউ ইজারাবিহীন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’