কাপাসিয়া ব্যুরো ॥
গাজীপুর: কাপাসিয়া উপজেলায় ৪৭তম আন্তঃস্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রীস্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতায় গত মঙ্গলবার বিকেলে লাল কার্ড দেখানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং শিক্ষকের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া তিন দফা হামলার ঘটনায় খেলোয়ার ও দর্শকসহ অন্তত ৫ জন মারাত্বক ভাবে আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে শিক্ষকরা রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ক্রিড়া সংস্থার সহ-সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামূল সরকার’কে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং বুধবার সকালে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দেন।
শিক্ষকের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করতে বুধবার সকালে শিক্ষকরা কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাকছুদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দায়ী এনামূল সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ তাকে ক্রিড়া সংস্থা থেকে বহিস্কার করতে উপস্থিত শিক্ষক নেতৃবৃন্দরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এ সময় বাধসাধেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রধান। ফলে দলীয় প্রভাব এবং অনুরোধের কারনে পুনরায় দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠক বসেন। শিক্ষকের উপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা এনামূল সরকার বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তার কৃতকর্মের জন্য শিক্ষক রুহুল আমীনের হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বৈঠকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রধান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান, উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন দর্জী বকুল, ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় হাইলজোরের প্রধান শিক্ষক শহীদুল্লাহ আজাদ, স্কাউট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন নয়ন প্রমূখ এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাযায়, উপজেলার কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভ্যানুতে তরগাঁও ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন কোহিনুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ বনাম সনমানিয়া ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন আড়াল জিএল স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিমের মধ্যে আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা চলছিল। খেলার শেষ পর্যায়ে কোহিনুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিমের গোল কিপার’কে প্রতিপক্ষ আড়াল জিএল স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিমের এক খেলোয়ার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তখন গোল কিপার উঠে গিয়ে ওই খেলোয়ারকে থাপ্পর মারে। এব্যাপারে রেফারী গোল কিপারকে লাল কার্ড প্রদশর্ণ করলে কোহিনুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীন তাতে প্রতিবাদ জানান। তখনই অর্তকিতে ক্রিড়া সংস্থার সহ-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামূল সরকার ওই শিক্ষকের উপর কিল, ঘুষি, লাথি ও সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মাঝে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে খেলা পন্ড হয়ে যায়।
উভয় দলের খেলোয়ার, শিক্ষক ও সমর্থকরা বাড়ি ফিরার পথে তরগাঁও মেডিকেল মোড় এলাকায় পুনরায় দুই পক্ষের মাঝে ব্যাপক মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ইমরান মাহমুদ সাকিব, কোহিনুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম (১৩) ও আবুল কালামসহ অন্তত পক্ষে ৫ জন মারাত্বক ভাবে আহত হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বিভিন্ন স্থানে ভর্তি করা হয়েছে। খেলা চলাকালীন সময়ে উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, ভ্যানু স্কুল কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাইজ উদ্দিন ফকির, উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বদু, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বকুল, উপজেলা স্কাউট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও এম আর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক আওলাদ হোসেন নয়ন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। খেলা’কে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনার ব্যাপারে উপস্থিত সকলেই সত্যতা স্বিকার করেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ক্রিড়া সংস্থার সভাপতি মোঃ মাকছুদুল ইসলাম জানান, খেলার মাঠে শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে সমাধান হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই ক্রিড়া সংস্থার মিটিং ডেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন দর্জী বকুল, অভিযুক্ত ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে যাতে কোন খেলার মাঠে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। শৃঙ্খলার স্বার্থে তিনি নিজেও পদত্যাগ করতে রাজি আছেন বলে জানান।