বৃহস্পতিবার , ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১১ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > কাপাসিয়ার বানার নদীর মানচিত্র ছিঁড়ে খাচ্ছে বালু দস্যুরা

কাপাসিয়ার বানার নদীর মানচিত্র ছিঁড়ে খাচ্ছে বালু দস্যুরা

শেয়ার করুন

আকরাম হোসেন রিপন
চীফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: ৭১ এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের যে মানচিত্র উপহার দিয়ে গেছে সেই মানচিত্রের একটি অংশ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা। অবৈধ ভাবে বানার নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে যা আজ পাকিস্তানী হায়েনাদের মতো ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে স্থানীয় ও পার্শবর্তী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার বালু দস্যুরা । তারা এতই প্রভাবশালী যে মা বোনের সম্ভ্রম হারানো ও বাড়ী ঘরের মালামাল লুটের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না এলাকাবাসী। যদিও বেশ কয়েকটি পরিবারকে ইতোমধ্যে জমির ফসল ও বাড়ী-ঘর সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দস্যুরা। সেই গ্রামটির হলো টোক ইউনিয়নের উলুসারা। যার বেশিরভাগ অংশই দস্যুদের পেটে। মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে কৃষি জমিতে সেঁচের। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে আরো আটশত একর কৃষি জমি।


জানা যায়, বিগত বছর খানেক আগে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা এই গ্রামের উপর নজর পরে বালু দস্যুদের। নদীপাড়ের পাঁচশত একর জমির মাটি কেটে নেয়ার পরিকল্পনা নেয় তারা। পাকিস্তানী রাজাকারের মতো এলাকার প্রভাবশালী দালালদের ম্যানেজ করা হয়। তারপর শুরু করে অপরূপ রূপের অধিকারী সাজানো গুছানো এই গ্রামটিকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়া। দিন রাত বেশ কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে শুরু হয় মাটি কাটা। গত বৃহস্পতিবার বিকালে বানার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা এর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে হতবম্ভ হয়ে যান। তবে এলাকাটি ভৌগলিক ভাবে উপজেলার সীমান্তবর্তী ও দুর্গম হওয়ায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভাল না থাকায় স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে পরিদর্শন দল আসার খবর শুনে ড্রেজার নিয়ে পূর্বেই সরে যায় দস্যুরা।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক হাজী আব্দুল বারেক নদীর পানির দিকে আঙ্গুল দিয়ে বলেন, ‘এখানে আমার ১২ বিঘা জমি ছিল যার কোন চিহ্নই এখন আর নেই। যে কোন সময় ভিটে বাড়ী টুকুও হারাতে পারি। তখন রাস্থায় থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না’।
স্থানীয় আব্দুর রশিদ ও আবুল কালাম অসহায়ত্বের কথা এভাবে জানায় যে, ‘আপনারা আসার কিছুক্ষণ আগেও তারা বালু উত্তোলন করছিল। দালালদের মাধ্যমে আপনারা আসার খবর শুনে পালিয়েছে। পাগলা থানার লোকজন এরা। তারা পালিয়েছে ঠিকই তবে, আমাদের ভয় হলো- যে কোন সময় রাতের আঁধারে বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে লুট করে মালামাল নিয়ে যাবে তারা। আর স্থানীয় দালালরা প্রচার দিবে এলাকায় ডাকাতি হয়েছে’।


স্থানীয় আরেক বাসীন্দা মোঃ শহীদুল্লাহ জানায়, ‘আমাকে চার দিনের সময় দেয়া হয়েছে, আমার জমি থেকে আলু ও অন্যান্য ফসল সরিয়ে নিতে; অন্যথায় এটুকুও ফেরত পাবোনা’।
স্থানীয় এক নারী আছমা আক্তার জানায়, ‘আমরা মেয়েরা কি ধরনের আতঙ্কে আছি তা লোক সমাজে বলা সম্ভব নয়। দস্যুরা আব্বাকে বলছে বাড়ি-ঘর ছেড়ে দিয়ে এলাকা ছাড়তে। তিন দিনের সময়ও দিয়েছে’। সামসুল মিয়া জানায়, ‘আমাদের ফসলসহ জমি নস্ট করে ফেলায় আমরা এখন দিশেহারা। মা বোনদের নিয়েও শঙ্কায় আছি। বালুদস্যুরা শুধু বালুই ডাকাতী করে না এরা রাতের আঁধারে কাপাসিয়ায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির নায়ক, মহা-নায়ক, আশ্রয়দাতা’।
এ ব্যাপারে গ্রামবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমির কাছে অভিযোগ করেছেন। জনতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে অবৈধ বালি উত্তোলন দুঃখ জনক। উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে বলেছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে আমি ঘঠনাস্থলে পৌঁছার আগেই ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টোক নয়ন বাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, কাপাসিয়া উপজেলার উলুসারা বানার নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার খবর পেয়ে বালু ব্যবসায়িরা পালিয়ে যায়। তাদের বাড়ি নদীর ওপাড় গফরগাঁও পাগলা থানায়।