ছাইদুর রহমান নাঈম, কিশোরগঞ্জ থেকে
একসময় কয়েক গ্রাম ঘুরে একটি কাঠের উপকরণ দিয়ে তৈরি দুতলা বাড়ির দেখা যেতো। যে গ্রামে এমন বাড়ি থাকতো সে বাড়ির মালিকই ছিলেন প্রতাপশালী। বর্তমানে একসময়ের জৌলুশ ছাড়ানো সেই বাড়িগুলো দেখা যায় জরাজীর্ণ। যা কিছু আছে, তাও ধ্বংসের পথে।
কিশোরগঞ্জে জেলায় ষাটের দশকে এসব বাড়িগুলোর আধিপত্য ও জৌলুশ ছিলো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইট, পাথরের আধিক্যতায় এসব বাড়ি বিলুপ্তির পথে। এখনো জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেখে মেলে বিশাল কাঠের তৈরি দুতলা বাড়ির। গজারি, সেগুন কাঠ আর মজবুত টিন দিয়ে তৈরি এসব বাড়ি এখনো ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কটিয়াদী উপজেলা পৌর এলাকায় বিভিন্ন মহল্লায় অন্তত ১০টি কাঠের তৈরি দুতলা বাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে মুমুরদিয়া ইউনিয়নে বেশকিছু দুতলা বাড়ি রয়েছে। আচমিতা, মসূয়া, গচিহাটা এলাকায় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে এসব বাড়ি। এসব ঘরের ভেতর দিয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা যেতো। মানুষ থাকতে পারতো। এছাড়াও জিনিসপত্র রাখা যেতো। বর্তমানে বাড়িগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে কিছু বাড়িতে এখনো মানুষ বসবাস করছে। এছাড়াও অনেক শৌখিন মানুষ মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর থেকে নকশা করা কারুকার্য কাঠের তৈরি ঘর নিয়ে এসে এলাকায় স্থাপন করেছেন।
মুমুরদিয়া বর্তিহাটা এলাকার আব্বাস আলী মাতাব্বর (৯৫) বলেন, একসময় এমন দুতলা বাড়ি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসতো। বাড়ি তৈরি শেষ হলে জেফত (দাওয়াত) দিয়ে মানুষকে খাওয়ানোর একটা রীতি ছিলো। বাড়িগুলো ছিলো পরিবেশবান্ধব৷
কটিয়াদী পৌর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, হীরালাল সাহার মোড়, পূর্বপাড়া মহল্লায় কয়েকটি পুরাতন কাঠের তৈরি দুতলা বাড়ি রয়েছে৷ বাড়িগুলো এখনো ঐতিহ্য বহন করে চলছে। হঠাৎ চোখে পড়লে মুহূর্তে কয়েক যুগ আগে ফিরে যায় মন। গ্রামে হাতেগোনা দুয়েকটা এমন ঘর দেখতে পেতাম।
ইতিহাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আর এক যুগের পরে হয়তো এসব পুরাতন টিন ও কাঠের তৈরি দুতালা বাড়ি গুলো বিলুপ্তি হয়ে যাবে। হয়তো যাদুঘরে এর স্মৃতি খুঁজবে নতুন প্রজন্ম।