শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কাজের মেয়াদ শেষ হলেও যমুনার তীর সংরন কাজ শেষ হয়নি

কাজের মেয়াদ শেষ হলেও যমুনার তীর সংরন কাজ শেষ হয়নি

শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ॥ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও যমুনা নদীর ডানতীর সংরন কাজ শেষ হয়নি। এজন্য সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারদের দায়ী করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও যমুনার ভাঙ্গন থেকে রা পাচ্ছে না সিরাজগঞ্জবাসী। তাদের মতে যমুনা নদীর তীর সংরন কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড গঠিত টাস্কফোর্সের বিশেষ নজরদারীতে থাকায় ঠিকাদাররা বিপাকে পড়েছেন।

একাজে অনিয়ম করতে পারছে না বলেই ঠিকাদার ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগ সাজসে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করেনি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবী টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় সময় মতো কাজ শেষ হয়নি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যমুনা নদীর তীর সংরন কাজ শেষ হলে ভাঙ্গন থেকে রা পেতো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ড সুত্রে জানা যায় যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে সিরাজগঞ্জ শহর রায় ২০১০ সালে ২৪৬ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

২০১২ সালের মধ্যে এই সংরন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি।

বরং যতটুকো কাজ হয়েছিলো তার অনেকাংশ চলতি বছর যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুতকায় ৯টি পয়েন্টে এবং কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী পর্যন্ত ৭টি পয়েন্টে এই কাজ হওয়ার কথা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ইতিমধ্যে কাজিপুরের ৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

ঠিকাদারদের একটি সুত্র জানায় নদীর তীরে প্রথমে বালির বস্তা নিপে করতে হবে। তার পর নিচ থেকে ৩০ মিটার পিচিং (শ্লোব) তৈরী করার পর উপরের ৫শ মিটার এলাকা জুড়ে ফুটপাত নির্মান করার কথা রয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে নদীর তীরে ১ লাখ ৫৪ হাজার জিও বালির বস্তা নিপে করতে হবে।

বড় বস্তায় ৭ এবং ছোট বস্তায় ৪ সেফটি করে বালি ভর্তি করে নদীতে নিপে করার কথা দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে সিডিউল মোতাবেক জিও বস্তা না ফেলেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

সুত্র আরো জানায় ২০টি পয়েন্টে ৩০ লাখ বস্তা ফেলার কথা রয়েছে। এতে ২ কোটি সেফটি বালির প্রয়োজন হবে।

এদের মধ্যে ১৭৫ কেজি ওজনের ৯৫ হাজার এবং ২৫০ কেজি ওজনের ৫৯ হাজার ৩শ ৩৬ পিচ বালির বস্তা নদীর তীরে নিপে করার কথা রয়েছে।

ছোট বস্তায় ৪ সেফটি আর বড় বস্তায় ৭ সেফটি বালি ভরে তা নদীর তীরে নিপে করবে ঠিকাদার। কিন্তু এসব ঠিকাদার এত বালি কোত্থকে উত্তোলন করেছে তা কেউ জানে না।

আর এ পরিমান বালির বস্তা যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় নিপে করলে বস্তার পাহাড় হয়ে থাকার কথা।

সুত্র মতে বালির বস্তা আমদানী করতে হয় অন্য জায়গা থেকে। বালি ছাড়া একটি ট্রাকে ৪ হাজার পিচ বস্তার ধারন মতা রয়েছে।

আর যে কোম্পনীর নিকট থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার পিচ বস্তা ক্রয় করা হয়েছে উৎপাদ মতা রয়েছে কিনা তা তিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছে ঠিকাদারদের একটি অংশ।

অন্য দিকে নদীর তীরে বালির বস্তা ফেলার পর নদীর তীর থেকে উপরের ৫শ মিটার এলাকা জুড়ে কার্পেট বিছিয়ে তার উপর ব্লক দিয়ে ফুটপাত তৈরী করবে ঠিকাদার।

কিন্তু ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা করতে পারেনি।

বরং নানা অজুহাতে শুস্ক মৌসুমে কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জুন মাসে বিল উত্তোলন করার পরিকল্পনা নিয়ে ঐ মাসের শুরুতে ব্লক তৈরীর কাজ করলেও জুনের শেষে তা আবারও বন্ধ রাখা হয়।

অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের পাথর ও বালি দিয়ে ব্লক তৈরী করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবী উন্নত মানের পাথর ও বালি সরবরাহ না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা ঐ পাথর দিয়ে ব্লক তৈরী করেছেন।

স্থানীয় পানি উন্নায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলাকে রা করতে সরকারের পে থেকে ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জোগসাজসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি।

বরং যতটুকু করা হয়েছে তার অধিকাংশ চলতি মৌসুমে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার বরাদ্দ দিলেও এসব অসৎ কর্মকর্তা আর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারনে যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রা পাচ্ছে না সিরাজগঞ্জবাসী।

চলমান কাজের বিল না পাওয়ার অভিযোগ করে বিলচতল-ঢেকুরিয়া ১নং সাইডের ঠিকাদার আবদুল মোমিন জানান, আমরা প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ করে এনেছি।

অথচ বিল পেয়েছি মাত্র ১৩ শতাংশের মতো। ব্যবসার সমস্ত টাকা এই কাজে আটকা পড়েছে। বাকি কাজ কি দিয়ে করবো এরই কোন সংস্থান হচ্ছেনা।

পাউবোর সংশ্লিষ্ট শাখায় ধরনা দিলেও বিলের দেখা মিলছে না। এমন কথা জানিয়েছেন সবগুলো প্যাকেজের ঠিকাদারগণ।

অসমাপ্ত নদীতীর সংরণ কাজ নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ায় নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরই) শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজিদুল ইসলাম সরদার বলেন সিরাজগঞ্জ শহর রা বাঁধের উত্তর পাশে খোকশাবাড়ি ও শৈলাবাড়িতে ২টি এবং দীন পাশে বাঐতারা ও মোল্লাবাড়িতে ২টি ক্রস নির্মানের জন্য ইতিমধ্যে বালি ফেলা হয়েছে।

এই ৪টি ক্রস বাঁধ সম্পূর্ণ্য রুপে শেষ করতে ৬শ কোটি টাকার ব্যয় হবে। টাকা বরাদ্দ পেলে নদীর তলদেশ থেকে বাঁধগুলো ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হবে।

এতে নদী মাঝ নদীতে সরে যাবে এবং রিংবাঁধগুলো রার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরও রাপাবে।

সিরাজগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা-১ সরোয়ার জাহান টিপু বলেন তীর সংরন কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। এ কাজে úানি উন্নয়ন বোর্ড গঠিত টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা সব সময় কাজে নজরদারী করেছেন। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সিডিউল মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ২৪৬ কোটি টাকার কাজে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।