বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: ব্যয় বাড়লেও এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরুর কোনো খবর নেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়কের। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে উড়াল সড়ক নির্মাণের জন্য সরকারের চুক্তি হয়েছিল ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী গত জুন-জুলাই মাসেই উড়াল সড়কের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল কাজ শুরু হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
উল্টো এই সময়ে ব্যয় বেড়েছে ২৩৭ কোটি টাকা। অবশ্য প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসে (অক্টোবর) এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করতে পারব। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মূল নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্ব প্রস্তুতি চলছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে গত মহাজোট সরকার বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এরই অংশ হিসেবে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের (সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) সেতু বিভাগ একটি চুক্তি সম্পন্ন করে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ওই চুক্তির পর ওই বছরেরই ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল এই উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চুক্তি অনুযায়ী শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। অথচ সাড়ে তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল এই প্রকল্পের। সূত্র জানায়, ওই চুক্তির পর নানা কারণে দীর্ঘ তিন বছরেও যখন কাজ শুরু করতে পারেনি ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, তখন সেতু বিভাগ তাদের সঙ্গে আবারও একটি চুক্তি করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় দফায় করা চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসের মধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু এবারও নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।সূত্র জানায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণের জন্য প্রথম দফায় নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ২৭ শতাংশ। বাকি টাকা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে ২৩৭ কোটি টাকা। প্রকল্প সূত্র জানায়, বিগত তিন বছরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। বেড়েছে ডলারের মূল্যও।
এর ফলে নতুন করে নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করতে হয়েছে। এ জন্য ব্যয় বেড়েছে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী এ প্রকল্পে এখন ব্যয় হবে আট হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প পরিচালক কাজী ফেরদৌস জানান, নানা কারণে মূল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা ছিল জমি অধিগ্রহণ। এটি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এর মধ্যে সাত একর জমি হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাকি জমির পুরোটাই বাংলাদেশ রেলওয়ের। তা ছাড়া নকশায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এ কারণে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে আবার চুক্তি করতে হয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে মূল নির্মাণ কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে এ প্রকল্প এলাকায় যেসব সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভিস রয়েছে সেগুলো সরানো হচ্ছে। এ কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তা ছাড়া মূল কাজের জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মোবিলাইজেশন শুরু করেছে।জানা গেছে, সংশোধিত নকশায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে এবং কমলাপুর থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত এবং পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার অংশের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করে কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। সংশোধিত নকশা অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে উড়াল সড়কটি যাবে বনানী স্টেশন পর্যন্ত। সেখান থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে যাবে কমলাপুর পর্যন্ত।
সেখান থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে শেষ হবে কুতুবখালীতে। মূল সড়কটি ২০ কিলোমিটার হলেও বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠানামার ৩১টি লুপ বা র্যাম্প থাকার কারণে এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৭ কিলোমিটার। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে ২৫ বছর পর্যন্ত পরিচালনা করবে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এ সময়ে তারা টোল আদায় করবে উড়াল সড়ক থেকে। (বিডি-প্রতিদিন)