শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > কষ্টে সময় যাচ্ছে এসব শ্রমজীবী মানুষের

কষ্টে সময় যাচ্ছে এসব শ্রমজীবী মানুষের

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রম বিক্রি করে জীবন চলে তাদের। কেউ রিকশা-ভ্যান চালান কাঁচাবাজারে। কেউ মাথায় ঝাঁপি নিয়ে পণ্য ওঠানামা করেন। কেউ ফুটপাতের ফেরিওয়ালা। দিন এনে দিন চলে তাদের। কাজ নেই তো খাবারও নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাদের বড় দুর্দিন। কষ্টে সময় যাচ্ছে এসব শ্রমজীবী মানুষের। অবরোধ আর হরতালে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল দশা। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের এখন বড় দুর্দিন। কেউ ঋণ করে চলছেন। টাকা দিতে না পেরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। এ রকম একজন জামালপুরের আবু তাহের মিয়া। বয়স চল্লিশের ঘরে। ঢাকায় এসেছেন কাজের খোঁজে। রাতে কাওরান বাজারে ট্রাক থেকে সবজি নামানোর কাজ করেন। হরতাল আর অবরোধের কারণে তার আয় অর্ধেক হয়ে গেছে। তাই এখন দিনে ফার্মগেটে কলা বিক্রি করেন। গ্রামে স্ত্রী আর দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ে ক্লাস ফাইভে আর ছোট মেয়ে এখনও মায়ের কোলে।

বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন না আগের মতো। নিজে এক বেলা খান। এভাবে চলতে থাকলে হয় তো কাজ ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হবে জানালেন তিনি। সুরুজ মিয়া সোনারগাঁও মোড়ে ভ্যানের ওপর পা গুটিয়ে বসে আছেন। চল্লিশ বছর থেকে ঢাকা শহরে রিকশা-ভ্যান চালান। হরতাল-অবরোধে রোজগার কমে গেছে। আগে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা উপার্জন করতেন। এখন ৩০০ টাকাও হয় না। এক ছেলে আর এক মেয়ে থাকলেও তারা খোঁজ রাখেন না। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে টঙ্গির একটি বস্তিতে থাকেন। কিভাবে দিন যাচ্ছে জানতে চাইলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘উপরওয়ালা চালাচ্ছেন। আগের চেয়ে কম খাই। আগে পাকা ঘর ভাড়া করে থাকলেও খরচ কমাতে বস্তিতে থাকি।’ নরসিংদীর যুবক বাবুল বাংলামোটরে কাগজের খেলনা বিক্রি করেন। পথচারীদের কাছে এসব খেলনা দিয়ে মজার মজার খেলা দেখিয়ে আকৃষ্ট করতেন। এখন পথে মানুষ কম। তাই বিক্রি কমে গেছে। আগে হাজার টাকার বিক্রি হলেও এখন ৩০০-৪০০ টাকার বিক্রিই কষ্টসাধ্য। টাকা দিতে পারেন না। তাই বাড়িতে ফোন করেন না। জানেন না তার বাবা-মা কেমন আছেন।

তারা কিভাবে চলছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আল্লাহ দেখতাছেন। গরিবেরা না খাইয়া মরে না।’ ইস্কাটন রোডে পান-সিগারেট ফেরি করেন ধীরেন্দ্র নাথ। আগে পেট্রল পাম্পে কাজ করতেন। হরতালের কারণে পাম্প বন্ধ। তাই নতুন পেশায়। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় এখানেও বিপদে পড়েছেন। সংসার কিভাবে চলছে জানতে চাইলে বলেন, ‘নিজে কম খাই। সন্তানকে খাওয়াই।’ স্ত্রীকে একটা হাসপাতালে ঝাড়ুদারের চাকরি যোগাড় করিয়ে দিয়েছেন। আর চার বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পান-সিগারেট ফেরি করে বেড়ান। তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে মুড়ি বিক্রি করেন রংপুরের চান মিয়া। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, এক মেয়ে বাসায়। ছেলেকে পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন না তাই এতিমখানায় রেখে এসেছেন। হরতালের কারণে তার আয় আগের চেয়ে কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না। বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন।

আগে তিনবেলা খেতে পারলেও এখন দু’বেলা খাবার জোটে না। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কিভাবে যাচ্ছে দিন জানতে চাইলে বলেন, ‘জীবনটা বিষাক্ত হয়ে গেছে। সরকার তো বড়লোকদের কথাই শোনে না। গরিবের কথা কি শুনবে?’ তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের শ্রমিক জাহেদুল সংসার চালাচ্ছেন চড়া সুদে নেয়া ঋণে। গত এক মাসে কাজে যাননি। কিভাবে ঋণ শোধ দেবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘অবস্থা ভাল হইলে ওভারটাইম করুম। ২৪ ঘণ্টা কাম করুম।’ ইস্কাটন রোডে গাড়ি ধোয়ার কাজ করেন হানিফ মিয়া। হরতালের কারণে রাস্তায় প্রাইভেট কার কমে যাওয়ায় তার আয় নেই বললেই চলে। বাড়িতে স্ত্রী আর দুই সন্তান। দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হতাশ তিনি। তার জিজ্ঞাসা- হরতাল আর অবরোধ শেষ হবে কবে?