প্রবাস ডেস্ক ॥
বিশ্বের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করছি আর নিজের জ্ঞানহীনতা নিয়ে ভাবছি। ইথিওপিয়ায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে একজন জাপানি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে গত ১৩ মার্চ। ওই ব্যক্তি ৮ মার্চ ইথিওপিয়ায় এসেছেন। মাঝে প্রায় ৬-৭ দিন তিনি তার কাজের প্রয়োজনে ঘুরেছেন আদ্দিস আবাবার কর্মমুখর এলাকাগুলোতে।
কী পরিমাণ লোককে তিনি এই সংক্রমণ ঘটিয়েছেন সেটা বলা মুশকিল। ইথিওপিয়া পৃথিবীর স্বল্পসংখ্যক দেশগুলোর মধ্যে একটি; যারা চীনে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পরও চীন থেকে সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করেনি। বিদেশি কূটনীতিক পর্যায়ে আমরা যারা কাজ করি, তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হচ্ছিল।
মনে হচ্ছিল, এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আমাদের অবাক করেনি। বরং এত দেরিতে এলো বলে আমাদের কি একটু অস্বস্তিতে ফেলে দেয়নি! যেন অবশ্যম্ভাবী ঝড়ের জন্য প্রতীক্ষা, যা থেকে দূরে যাওয়া অসম্ভব কিন্তু পরিত্রাণের পথ অজানা।
যখন ওই জাপানি ভদ্রলোকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলো। তারও আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একটা প্রস্তুতি ছিল। ইথিওপিয়ার মতো দেশ যার মেডিকেল কাঠামো আমাদের গোড়ালী সমানও নয়, তারা এরই মধ্যে ১২৫০০০ লোকের জন্য কোয়ারেন্টাইন স্পেস তৈরি করেছে রাজধানী থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থ আর কারিগরি সাহায্য নিয়ে।
কিন্তু টেস্ট করার সামর্থ্য এখনো সীমিত। এরই মধ্যে কয়েকটি দূতাবাসের কূটনীতিকদের পরিবারকে আদ্দিস আবাবা থেকে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের জন্য কিছু মাস্ক আর স্যানিটাইজার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও ভালো হতো। এগুলো সব বাংলাদেশিদের কাজে লাগতো।
নিজেরা করোনা সংক্রমণের পরপরই দোকানে গেছি, দোকান থেকে জরুরি সামগ্রী চাল, ডাল, তেল, ময়দা, শুকনো খাবার আগামী ১৫ দিন চলার মতো করে কিনে রেখেছি যাতে আবার যেতে না হয়। এর মধ্যেই এদেশেও সাদা মানুষদের পাগলামী দেখেছি (এক গাদা করে জিনিস কেনার)। তারপর ১৭ মার্চের অনুষ্ঠান করেছি স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণে। অনেক বাংলাদেশি বাস্তবতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে আসেননি। আমাদের মতো সরকার আর জনগণের চাকরের তো নিরাপত্তা বলে কোনো কিছুর দরকার হয় না।
গতকাল থেকে জ্বর আর ঠান্ডা নিয়ে নিজেকে হোম কোয়ারেন্টাইন করেছি। বাসা থেকে বের হইনি। কিন্তু তিন-চার জায়গায় ফোন করেও এখনো টেস্ট করার সুযোগ পাইনি। বিশেষ কর্তৃপক্ষ ফোনের পর বাসা থেকে টেস্ট স্যাম্পল নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনো নিয়ে যায়নি। তাই রাষ্ট্রদূতের অনুমতিক্রমে বাসায় অবস্থান করতে পারছি। এর মাঝে রিপোর্ট পাচ্ছি, ইথিওপিয়ায় বিদেশিদের নানাভাবে হেনস্থা এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করার কথা। ভবিষ্যতে কি আছে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে ৮ হাজার ৯৬১ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৫ হাজার ৬৭৩ জন।
বিশ্বের ১৭৩টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৯২৮ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ২৪৫ জন। এরপরই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৭১৩ জন। জাগোনিউজ।