বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে এক সপ্তাহে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক সপ্তাহে এটি সর্বোচ্চ। এর আগের সপ্তাহে এমন মৃত্যু ছিল ৭৩ জনের। আগের চেয়ে মৃত্যু বেড়েছে ৭০ শতাংশ। সব মিলিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে সারা দেশে মারা গেছেন ৮৬১ জন।
২২ মার্চ থেকে ৬ জুন পর্যন্ত সময়ে এমন মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিপিও। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দিচ্ছে তারা।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে আজ বৃহস্পতিবার নতুন প্রতিবেদন দিয়েছে বিপিও। বিপিও বলছে, ৮ মার্চ থেকে করোনা বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেখা যায়, ২২ থেকে ২৮ মার্চের এই সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। পরের সপ্তাহে তা ৬৩ জনে পৌঁছায়। পরের সপ্তাহগুলোয় ১০৬, ১২০ জনে পৌঁছায়। তারপর আগের সপ্তাহের চেয়ে কমতে থাকে। গত ছয় সপ্তাহে কমার দিকেই এর প্রবণতা ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে এটি বাড়ছে।
বিপিও গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করছেন। ফলে মাঝেমধ্যেই প্রকাশিত পুরোনো তথ্য পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর আগে ১৯ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১ হাজার ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল তারা। পরে এটি সংশোধন করে। এ সপ্তাহের প্রতিবেদনে আগের তিন সপ্তাহের দেওয়া তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে আগের তিন সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনা রোগীর মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাঁরা করোনা আক্রান্ত না–ও হতে পারেন। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে ৮৫ শতাংশের করোনা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে সিজিএসের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার উপসর্গ এখন সবার কাছে পরিষ্কার, তাই ঘটনাও বেশি সামনে আসছে। হাসপাতাল সব রোগী নিতে পারছে না। পরীক্ষাও পর্যাপ্ত হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গবেষকেরা বলছেন, দৈনিক সংবাদপত্র জাতীয় ও আঞ্চলিক, টেলিভিশন, অনলাইন মিলে ২৫টি গণমাধ্যম থেকে প্রতিদিন তথ্য নিচ্ছে বিপিও। এরপর এসব তথ্য থেকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যটা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে মাঠপর্যায় থেকে এসব তথ্য যাচাই করা হয় না।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরও কয়েকটি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছে বিপিও। তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনা নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ৬ জুন পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এ ছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৫৭ জনকে।
বিপিও প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ১৬১টি নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্ক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শেষ সপ্তাহে এটি ৫৪ শতাংশ কমেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩৮টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪৫ শতাংশ এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৬ শতাংশ। এ ছাড়া করোনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ১২৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। এতে ১৩ জন মারা গেছেন এবং ৫৪১ জন আহত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয় প্রতিদিন। তবে করোনার উপসর্গ বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয় না।