বাংলাভূসি২৪ ডেস্ক ॥
সম্ভবতঃ গত মঙ্গলবার একটা নিউজ পড়ছিলাম, পাঁচ সপ্তাহের একটা বাচ্চা প্রায়ই কাঁদে আর মা বাবাকে খোঁজে ,মানে মা- বাবার কোলে শান্ত হয়, এইজন্যে বিরক্ত হয়ে বাবা বাচ্চাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বারো ফিট দূরের কিচেনে। এতদূর ছিটকে গিয়ে কেবিনেটে বাড়ি খেয়ে স্কাল ফ্র্যাকচার এবং হেড ইনজুরি হয়েছে বাচ্চার। ঘর থেকে পুলিশের কাছে ফোন করে জানানো হয়েছিলো বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাদের হেল্প দরকার। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে পাষণ্ডটি বলেছিলো হাত ফসকে মেয়ে সিংক পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করে বাচ্চাটা মারা যায়। আল্লাহতায়ালা তাকে আরামের দেশে নিয়ে যান। ভালো আছে নিশ্চয়ই সোনামণিটা সেখানে। ঘটনাটা আমেরিকার এক অঙ্গরাজ্যে।
আহা কী ভয়ানক অপরাধ বাচ্চার ! বিয়িং ফাসি !! যে রিলিফ নিজের সন্তান হত্যার মাঝে নিহিত,তাকে আমি আরাম বলিনা। বলি বিকার।
এইটুকু লিখে আমার থেমে যাওয়া উচিত। এরচেয়ে বেশি লিখতে পরিশ্রম হয়। মানসিক শ্রম। বুকের ভেতরে ভয়ংকর শব্দে ঢাক বাজে। হাতের উল্টোপিঠ ভিজে যায়। বারবার।
কিন্তু লিখি। আরো দুইচারটা লিখি।
একটা কেইস পড়েছিলাম, চীনে এক প্রেগনেন্ট মা কম্পিউটারে গেইমস খেলছিলো। লেবার পেইন ওঠে হঠাৎ। সে বিরক্ত হয়ে টয়লেটে গিয়ে নিজে নিজে ডেলিভারী করে কমোডে জীবন্ত একটা বাচ্চা ফেলে দিয়ে এসে বসে আবারো গেইমস খেলা শুরু করে। পরে বাবা ফিরে এসে হতভাগ্য শিশুটিকে কমোডে মৃত আবিষ্কার করে।
এত বড়ো নেশা কম্পিউটার গেইমস!! সম্ভবতঃ কিছু গেইমস আছে, বন্ধু বান্ধব বানিয়ে সারাদিন শেয়ারিং কেয়ারিং কনসার্ন। ইত্যাদি ইত্যাদি ননসেন্স। যে খেলা নিজের সন্তানকে এতো তুচ্ছ করবার মতো মানসিক গঠন তৈরি করে দেয়, তাকে আমি বলি ডেথ গেইম।
প্লিজ এভয়েড দোজ।
আবারো কম্পিউটার গেইমস এবং মা। তিনবছরের বাচ্চা বারবার এসে কথা বলছিলো, বিরক্ত হয়ে মা বাচ্চাকে মেরে ফেলে। কিভাবে মনে নেই। সম্ভবতঃ শ্বাসরোধ। এরপর খেলা শুরু করে আবার।
খেলা এতোবড়ো !!! এই স্টুপিড খেলার প্রতি, এই স্টুপিড আকর্ষণের প্রতি তীব্র ঘৃণা রেখে যাই।
বাবা মোবাইলে কিছু একটা করছিলো । পাঁচমাসের বাচ্চা কাঁদছিলো বলে বাচ্চাকে মেরে ফেলে। বাচচার অপরাধ সে কাঁদছিলো। আরেকরুমে মা অন্য কিছু করছিলো। বাবাটিকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলো।
পুলিশ এসে বাচ্চার নাকেমুখে রক্তমাখা দেখতে পায়। এবং আশ্চর্য্য এই যে বাচ্চার সারাশরীরে কামড়ের দাগ ছিলো। পরে অনেক জিজ্ঞাসবাদের পর সে জানায় কয়েকবার রাগ করে কামড়ে দিয়েছে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে!! তারপর শেষমেষ মহাবিরক্ত হয়ে বালিশ চেপে ধরেছে নাকেমুখে!
শরীর শিউরে ওঠে ভাবলে। এতোদীর্ঘ সময়েও হুঁশ হয়নি বাবার খোলসে থাকা বর্বর প্রাণীটির। মোবাইলে কিছু ছুটে যাচ্ছিল তার!
বাবামা দুজনই ফ্রি লাইফ লীড করতে চায়। ইচ্ছেমত পার্টি, আড্ডা, ক্লাব। মিডিয়া। বাচ্ছাকে অত্যাচার করে। বাচ্ছা রেসপনসিবিলিটি। বাচ্চা বোঝা। তাই বারবার এবিউজ, টর্চার। দফায় দফায় বাচ্চার ফ্র্যাকচার হয় এখানে ওখানে। একদিন বাবা বেদম মারতে মারতে মেরেই ফেলে বাচ্চাকে। বয়েস ছিলো চারবছর ওই অসহায় শিশুটার। পুলিশকে তারা বলে, সিঁড়ি থেকে পরে গেছে বাচ্চা।
ইউ এস। বাবা এগারোমাসের বাচ্চাকে গাড়িতে রেখে শপিং করতে চলে যায়। তারপর চারপাঁচ ঘন্টা পর ঘরে ফিরে বাচ্চাকে গাড়িতে রেখেই ঘরে ঢুকে ঘুমিয়ে যায়।
আটঘন্টা পর পুলিশ বাচ্চাটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।বাবুটার বডি টেম্পারেচার তখন ছিলো প্রায়একশোআট ডিগ্রী !!
আহা! না জানি কী কষ্ট পেয়েছিলো মানিকপাখিটা! কত কেঁদেছে !!
ভাবলেই হাতপা অসাড় হয়ে যায়। এতো উৎকট শপিং!! এতো প্রিয় এলকোহল।
একইভাবে আরেকবাবা সেক্সটিং এ ব্যস্ত ছিলো, বাচ্চা গাড়িতে তার মনে নাই। বাচ্চা মারা যায়।
একজন মা রেস্টুরেন্টে দীর্ঘসময় ধরে খেতে খেতে গাড়িতে তার বাচ্চা মারা যায়।
জর্জিয়া/ আরকানসাসে/ ফ্লোরিডা/ টেক্সাস। এবং আরো অনেক তথাকথিত অতি উন্নত স্টেটগুলো, দেশগুলো। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নসময়ে মা কিংবা বাবা তাদের বাচ্চাদের গাড়িতে রেখে কাজে চলে গেছে। ভুলে গেছে। বাচ্চারা মারা গেছে।
বলে রাখা ভালো, ফ্যামিলি নাই। বাচ্চা আছে। সেও বোঝা। হটাও। মেরে ফেলে বাচ্চা রিলিফ পাও। এও তাদের কমন। যেকোন উপায়ে।
পরিসংখ্যান বলছে তিনবছরের কমবয়েসী প্রায় পঞ্চাশের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় গাড়িতে ভুলে ফেলে যাবার কারণে ওসব দেশে বছরে। যদিও ওরা বলছে এর সতেরো পার্সেন্ট ইনটেনশনাল। আমি বলি সবই।
আমেরিকার পুলিশ রেকর্ড আরো বলে, বছরে ষোলোশোর বেশি শিশু এভাবে এবিউজড বা নেগলিজেন্সির শিকার হয়ে মারা যায়। আশি পার্সেন্ট এর বয়েস তিন এর নীচে। এবং এবাউট নাইনটি পার্সেন্ট নিজের বাবামায়ের হাতে।
আমার বিস্ময়ের সীমা থাকেনা, কিভাবে সম্ভব?!!!!! একফোঁটা , মায়ামায়া, টুকটুক শিশু ! যাদের অপর নামই আদর!
হতাশা, ক্ষোভ ফেনিয়ে ওঠে বুকের ভেতর, কষ্ট? সে বর্ণনা করবার ভাষা খুঁজে পাইনা। কিভাবে?!!
আহা,অন্যে যখন কেউ কিছু করে বা দুঃখ দেয়, ব্যথা দেয়, যখন মনে ভয়, যখন অনিরাপদ, আমরা মায়ের আঁচলে, বাবার ছায়ায় নিজেকে লুকাই। আর ওরা? কি অসম্ভব দিশাহারা ওইটুকুন শিশু।
শুধু ভাবি, ভাবতে এতো কষ্ট, সইতে গিয়ে কেমন লেগেছিলো আহা ছোট্ট সোনামণিগুলোর? কেমন লাগতো তাদের? কেমন লেগেছে তাদের?
সারাপৃথিবী যদি বৈরী হয়ে ওঠে, একমাত্র যেখানে আশ্রয়, সেখানেই তাদের শঙ্কা ভয় আর নির্যাতনের আখড়া। সেটাই অনিরাপত্তা!
আহা কি ভাবতো তারা, কিরকম আশ্চর্য্য লাগতো তাদের? কিরকম সে ব্যথা? ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই।
ভালোবাসা শব্দটা যারা কোনদিন জানেনি। মাবাবার স্নেহের মতো অপার্থিব কিছুর সাথে যাদের কোনদিনই পরিচয় ঘটেনি, যারা নিবিড়তম আশ্রয়েই পেয়ে গেছিলো সবচে নির্মম শাস্তি?!
কেমন লাগতো তাদের ?! কেমন?!
আমি বলছি এতো কাজের, এতো আধুনিকতার, এতো ইনভলভমেন্টের দরকারটা কি, যা আমার নিজের বাচ্চাকে ভুলিয়ে দেয় ?! যেসব উন্নতি মা বাবাকে স্রেফ জন্মপরিচয়ের লেবেল ছাড়া কিছুই দিতে পারেনা আর তৈরি করে প্রকৃতির সবচে জঘন্য হন্তারক, সেসব ডেভেলপমেন্টকে আসলে মনুষ্যত্বে পশ্চাদপদতা ছাড়া আর কিছু বলতে ইচ্ছে হয়না।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
তাই বলে ভাবিনি, শিশুদের সবচে ভরসার জায়গা, মা বাবার স্নেহের কোল হয়ে উঠবে বিষের সমুদ্র।নির্মমতম।
মাঝেমাঝে ভাবতাম আমাদের দেশ কত অনুন্নত। কত কম আধুনিক।
আজকাল এসব দেখেশুনে মনে হয় ভালোই হয়েছে। আমাদের শিশুরা তাই এখনো আমাদের কাছে সবচে দামী।
ভালো থেকো সোনামণিরা মাবাবার কোলে আদরে নির্ভরতায়। যেন তোমাদের বাবামায়ের কোনদিন এতোটা মুক্ত, এতটা ব্যস্ত, এতোটা প্রোটাটাইপ, এতো নেশাগ্রস্ত, এতোটা প্রযুক্তিনির্ভর হতে না হয়, যে, তাদের সন্তানদের জন্য সময় বা ভালোবাসায় টান পড়ে। দোয়া করি সর্বান্তকরণে।
এইসব বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে বিজয় বলতে আমার বড় বাঁধে। সে উন্নতির বুকে সজোরে লাথি দিতে আমি প্রস্তুত।
এসবের নেশায় বা প্রভাবে এতো এতো নোংরা অসভ্য খুনী তৈরী হওয়া ও তাদের বেড়ে ওঠার কথা বলছি আমি।
মোটামুটি এই বাংলাদেশ, কম আধুনিক বাংলাদেশ, কম উন্নত বাংলাদেশ,
টিকে থাকুক হাজার হাজার বছর। এই দোয়া। ফেসবুক থেকে