শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ : কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে পরলোকে

‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ : কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে পরলোকে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে আর নেই। ১৬০ দিন বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থেকে গতকাল ভোরে পরলোকগমন করেন মান্না দে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বুকে সংক্রমণ ও কিডনির সমস্যা ভুগছিলেন। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। কিংবদন্তি এই শিল্পী ভারতের সঙ্গীতাঙ্গনকে বহুমাত্রিক অবদানে ঋদ্ধ করে গেছেন।
তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেও ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ এর মতো কালজয়ী সব গানের মাধ্যমে তার ভক্ত-শ্রোতাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। গায়ক হিসেবে আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সফল সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব মান্না দে। বিশেষ করে, হিন্দি ও বাংলা সিনেমায় গায়ক হিসেবে বহু সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। বিখ্যাত এ গায়ক বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, আসামিসহ বিভিন্ন ভাষায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে বিশ্ব সঙ্গীতাঙ্গনের নিজের স্থান করে নিয়েছেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাকেই হিন্দি গানের ভুবনে সর্বকালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক সঙ্গীতবোদ্ধা।
আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মান্না দে’র মরদেহ গতকাল সকাল দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর রবীন্দ্র কলাক্ষেত্রে রাখা হয়। দুপুরে বেঙ্গালুরুর হিব্বল মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। মান্না দে’র মৃত্যুতে উপমহাদেশের চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, রাজনীতিসহ সব মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে বাবা পূর্ণচন্দ্র এবং মা মহামায়া দে’র ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মান্না দে। আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা গায়ক হিসেবে তিনি পরিচিত হন মান্না দে নামে। তার বাবা পূর্ণচন্দ্র এবং মা মহামায়া দে। গানের ব্যাপারে চাচা সঙ্গীত আচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে তাকে খুব বেশি অনুপ্রাণিত ও উত্সাহিত করেছেন। এছাড়া ওস্তাদ দবির খানের কাছ থেকে গানের শিক্ষালাভ করেন। ‘ইন্দু বাবুর পাঠশালা’ নামে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তারপর স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল এবং কলেজে স্নাতক শিক্ষাগ্রহণ করেন। কলেজে পড়াকালীনই সহপাঠীদের গান শুনিয়ে মাতিয়ে রাখতেন। সে সময় আন্তঃকলেজ গানের প্রতিযোগিতায় মান্না দে টানা তিন বছর তিনটি আলাদা বিভাগে প্রথম হন।
১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তামান্না’ চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে মান্না দে’র অভিষেক ঘটে। সুরাইয়া’র সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীতে কণ্ঠ দেন, যার সুরকার ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। ওই সময় গানটি খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৫০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মশাল’ ছবিতে শচীব দেব বর্মণের গীত রচনায় ‘ওপার গগন বিশাল’ নামে একক গান গেয়েছিলেন মান্না দে। এ গানের কথা লিখেছিলেন কবি প্রদীপ। ১৯৫২ সালে মান্না দে বাংলা ও মারাঠি ছবিতে একই নামে এবং গল্পে ‘আমার ভূপালী’ শীর্ষক একটি গান করেন। এসবের মধ্য দিয়েই সঙ্গীতাঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও পাকাপোক্ত করেন তিনি এবং জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি লাভ করেন।
১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারকে বিয়ে করেন মান্না দে। তার দুই মেয়ের নাম সুবমা ও সুমিতা। মান্না দে’র স্ত্রী সুলোচনা গত বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
২০০৫ সালে বাংলাভাষায় তার আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ খ্যাতিমান আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়। পরে এটি ইংরেজিতে ‘মেমরিজ-কাম এলাইভ’ হিন্দিতে ‘ইয়াদেন জি ওথি’ এবং মারাঠি ভাষায় ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে ভাষান্তর হয়। মান্না দে’র জীবনী নিয়ে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। মান্না দে সঙ্গীত একাডেমি তার সম্পূর্ণ আর্কাইভ বিকশিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রখ্যাত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মান্না দে’র সঙ্গীত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ষাট বছরের সঙ্গীত জীবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদশ্রী’, ২০০৫ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ২০০৯ সালে দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননায় ভূষিত করেন ভারত সরকার। এছাড়া ২০০৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডি.লিট সম্মাননা লাভ করেন।
বাংলাদেশেও এসেছিলেন মান্না দে। তার সঙ্গীত পরিবেশনা মুগ্ধ বিমোহিত করেছে বাংলাদেশী সঙ্গীতপ্রেমীদের।